সোমবার দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি। ছবি: রয়টার্স।
কখনও চরমে পৌঁছচ্ছে, কখনও আবার সামান্য নামছে। গত কয়েক দিন ধরে দিল্লির বাতাসের গুণগত মানের সূচকের (একিউআই) ছবিটা ঠিক এ রকমই। ওঠা-নামার এই খেলায় উদ্বেগটা যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। সোমবারও রাজধানীর দূষণচিত্রে খুব একটা হেরফের হল না। পরিস্থিতিটা ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে উদ্বেগজনক জায়গাতেই।
দূষণের দায় কার? এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েনকে এ দিন তীব্র ভর্ত্সনা করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বধীন বেঞ্চ এ দিন বলে, “এই পরিবেশে কী ভাবে বাঁচব? ঘরের ভিতরেও কেউ নিরাপদ নয়। যথেচ্ছাচার চলছে।”
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ দিন সকাল ৭টায় বাতাসের গুণগত সূচকের (একিউআই) গড় ছিল ৭০৮। যা দূষণের পরিভাষায় ‘অতি বিপজ্জনক’। তবে সাড়ে ৭টার পর থেকে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়। সকাল ১০টায় দিল্লির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একিউআই ছিল ৪৫০-এর উপরে। যা দূষণের বিপজ্জনক বিভাগেই পড়ে। আনন্দ বিহারে একিউআই ছিল ৪৬৭, লোধি রোডে ৩৯২, অশোক বিহারে ৪৪৬, আর কে পুরমে ৩৯৯, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৪১৩, দিল্লি ইউনিভার্সিটি নর্থ ক্যাম্পাসে ৪৪৬।
রবিবার রাজধানীর একাধিক জায়গায় যেমন বাওয়ানা, জাহাঙ্গিরপুর, রোহিণী, সোনিয়া বিহার, শাহদরা, ওখলা, মেজর ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম, আনন্দ বিহার, পাঞ্জাবি বাগ, পুসা, মন্দির মার্গ, মুণ্ডকা, শ্রীনিবাসপুরী এবং জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে একিউআই ৯৯৯ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা ছিল গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ দিন সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা যথেষ্ট কম থাকায় বহু বিমানের পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেরিতে ছাড়ছে অনেক বিমান। দূষণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এ দিন সকাল ৮টা থেকেই যান চলাচলের ‘জোড়-বিজোড়’ নিয়ম চালু হয়েছে। কেউ যাতে নিয়ম লঙ্ঘন না করেন, তা নজরে রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ২০০ জনের ট্র্যাফিক পুলিশের একটি দল মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রায় পাঁচ হাজার সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যে সব গা়ড়ির নম্বরের শেষ সংখ্যা ১,৩,৫,৭,৯, সেই গাড়িগুলোকে ৪, ৬, ৮, ১২ এবং ১৪ নভেম্বর রাস্তায় বেরতে নিষেধ করা হয়েছে। আবার ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩ এবং ১৫ নভেম্বরে ০, ২, ৪, ৬, ৮ সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় নামানো যাবে না বলেই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। শুধু ১০ নভেম্বর অর্থাত্ রবিবার এই নিয়মে রাজ্যবাসীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই নিয়ম চলবে। নিত্যযাত্রী ও সাধ্রাণ যাত্রীদের চাপ সামলাতে এ ক’দিন ৬১টি অতিরিক্ত ট্রেন চালাবেন দিল্লি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় ৫০০টি অতিরিক্ত বাস নামিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের সরকার গড়বে কে, সমাধান সূত্রের খোঁজে সনিয়া-শরদ, শাহ-ফডণবীস বৈঠক রাজধানীতে
আরও পড়ুন: নাগরিক পঞ্জি ভবিষ্যতের ভিত্তি, বক্তব্য প্রধান বিচারপতির
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া জোড়-বিজোড় নিয়ম প্রসঙ্গে বলেন, “শস্যের গোড়া পোড়ানোর ফলে পুরো উত্তর ভারতকে গ্রাস করেছে ধোঁয়া। এই মুহূর্তে আমরা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছি না। তবে জোড়-বিজোড় নিয়ম যদি আগামী ১০ দিন মেনে চলা যায়, তা হলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলতে পারে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে। সকলের কথা ভেবেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।” গাড়িতে নয়, মন্ত্রী এ দিন কাজে গিয়েছেন সাইকেল চালিয়ে। সেই ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
দূষণবতী যমুনা। ছবি: রয়টার্স।
অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী অবরবিন্দ কেজরীবাল এ দিন তাঁর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি। জোড়-বিজোড়ের নিয়ম মেনেই ভাড়ার গাড়ি করে নিজের দফতরে গিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। দূষণ প্রসঙ্গে কেজরীবাল বলেন, “যে ভাবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে জয় পেয়েছি, দূষণকেও সে ভাবে পরাস্ত করব।” তবে শুধু দিল্লি উত্তর ভারতের এই দূষণের বিরুদ্ধে একা লড়তে পারবে না। প্রতিবেশী রাজ্যগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানিয়েছেন কেজরীবাল। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনও ট্যাক্সি অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
রবিবার হালকা বৃষ্টি হয়েছিল দিল্লিতে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করেছিলেন রাজ্যবাসী। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়ইনি, উল্টে আরও খারাপ হয়েছে। এরই মধ্যে একটি অনলাইন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রবল দূষণে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা অন্য শহরে চলে যেতে চাইছেন। পাকাপাকি ভাবে যেতে না চাইলেও ১৬ শতাংশ সাময়িক ভাবে অন্যত্র সরে যেতে চাইছেন। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মহার প্রভাবে পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লিতে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।