উত্তরপ্রদেশে লাইনচ্যুত ট্রেন, মৃত ৩৮

হাতে মালপত্র নিয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক যাত্রী। সামনেই লখনউ-বারাণসী শাখার বছরাবাঁ স্টেশন। সেখানে থামার কথা ট্রেনটির। কিন্তু এ দিন সকালে প্ল্যাটফর্মে না থেমে দ্রুতবেগে এগিয়ে যেতে শুরু করে দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেস। কী করবেন ভেবে উঠতে না উঠতেই আচমকা প্রচণ্ড আওয়াজ ও ঝাঁকুনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

হাতে মালপত্র নিয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক যাত্রী। সামনেই লখনউ-বারাণসী শাখার বছরাবাঁ স্টেশন। সেখানে থামার কথা ট্রেনটির। কিন্তু এ দিন সকালে প্ল্যাটফর্মে না থেমে দ্রুতবেগে এগিয়ে যেতে শুরু করে দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেস।

Advertisement

কী করবেন ভেবে উঠতে না উঠতেই আচমকা প্রচণ্ড আওয়াজ ও ঝাঁকুনি। মালপত্র নিয়ে কামরাতেই উল্টে পড়েন বহু যাত্রী। কারও জ্ঞান ফিরেছে হাসপাতালে। কারও ফেরেইনি। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী জেলার এই রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। আহত প্রায় ১৫০ যাত্রীর মধ্যে অন্তত ২১ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, ট্রেনটি এ দিন বেশ জোরেই ছুটছিল। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সেটির বছরাবাঁ স্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল। স্টেশনে ঢুকে দ্রুতবেগে এগোতে এগোতে এক সময়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে লাইনচ্যুত হয় ইঞ্জিন ও তিনটি কামরা। পরে দেখা যায়, লাইন ফুরিয়ে গিয়েছে। ট্রেন নেমে গিয়েছে মাটিতে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে লাইন ফুরিয়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা, সেটি আসলে লুপ লাইন। মেন লাইন ফাঁকা রাখার জন্য নিয়মমাফিক ট্রেনটিকে এই লুপ লাইনে ঢোকানো হয়েছিল। এবং স্টেশনে থামার কথা থাকলে কোনও ট্রেন যাতে লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করে আবার মেন লাইনে উঠে না পড়তে পারে, তার জন্যই নিয়মমাফিক লুপ লাইনের অপর প্রান্ত খোলা ছিল। অথচ এই ট্রেনটি সিগন্যাল উপেক্ষা করেই লুপ লাইন ধরে সোজা এগিয়ে যায়। তার পর খোলা মুখ দিয়ে মাটিতে নেমে পড়ে।

দুর্ঘটনার সময়ে স্টেশন ও তার আশপাশে প্রচুর মানুষ ছিলেন। তাঁরাই প্রথমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কিছু ক্ষণ পরে কয়েক জন চিকিৎসক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উত্তরপ্রদেশে সরকারের বিশেষ উদ্ধারকারী দল। ঘটনাস্থলে যায় রেলের ‘অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ট্রেন’ও। আহতদের উদ্ধার করে সেই ট্রেনেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্য সরকারের তরফে লখনউয়ের তিনটি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি শয্যার বন্দোবস্ত করা হয়। সেই তিন হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিংহ ও রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে মিত্তল খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান। হাসপাতালগুলিতে গিয়ে আহতদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা।

কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তদন্ত করবেন ‘কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি’ (উত্তর শাখা)। প্রাথমিক ভাবে রেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, চালক ওই স্টেশনের হোম সিগন্যাল উপেক্ষা করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও কমিশনার ও রেলওয়ে সেফটি-র রিপোর্ট পাওয়ার পরেই কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে বোর্ডের কর্তারা। এই দুর্ঘটনার পরে এ দিন লখনউ-বারাণসী শাখায় ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার অনেক পরেও আটক কামরাগুলি থেকে শোনা গিয়েছে আহতদের আর্ত চিৎকার। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যাত্রীদের জিনিসপত্র আর ছিন্নভিন্ন কামরার অবশিষ্টাংশ। উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু হলেও কামরাগুলি একে অপরের সঙ্গে এমন ভাবে জুড়ে গিয়েছিল যে সেখান থেকে আহত ও মৃতদের উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। শেষে গ্যাস কাটার দিয়ে ইস্পাতের চাদর কাটা হয়। উদ্ধার করা হতে থাকে একের পর এক মৃতদেহ। আহতদের পাঠানো হতে থাকে হাসপাতালে।

রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার ও আহতদের যথাক্রমে ২ লক্ষ টাকা ও ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও আলাদা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে রেল ও যাত্রীদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement