—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ গঠন করে কংগ্রেস ও অন্য বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের লোকসভা নির্বাচনে লাভ হলেও সিপিএম ও বাম দলগুলির অধঃপতন অব্যাহত। সিপিএমের আগামী পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক পর্যালোচনায় একে ‘প্রহেলিকা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণের পরে প্রকাশ কারাটের তদারকিতে তৈরি রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কংগ্রেস ও কিছু আঞ্চলিক দলের অবস্থান লোকসভা নির্বাচনের পরে মজবুত হলেও সিপিএম ও বামেদের অধঃপতন অব্যাহত রয়েছে। সিপিএম সামগ্রিক ভোটের মাত্র ১.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র চারটি আসনে জিতেছে। ২০১৯-এ সিপিএম তিনটি আসনে জিতেছিল। ভোট পেয়েছিল ১.৭৭ শতাংশ। এই চারটি আসনের মধ্যে কেরলের একটি আসন বাদে তামিলনাড়ুর দু’টি ও রাজস্থানের একটি আসন সিপিএম জিতেছে শরিক দলের সাহায্যে। রাজনৈতিক পর্যালোচনা অনুযায়ী, ‘দলের নিজস্ব শক্তি সবসময় জেতা আসনের সংখ্যা ও ভোটের হার দিয়ে বিচার হয় না, কিন্তু এই ফল সিপিএমের প্রভাব ও গণভিত্তির ইঙ্গিত’। ২০২২-এর পার্টি কংগ্রেসের পর থেকে যে ১৩টি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও এই ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব ও গণভিত্তি স্পষ্ট। ত্রিপুরা বাদে বাকি সব বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম ১ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছে।
দিল্লিতে সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আজ এই রাজনৈতিক পর্যালোচনা গৃহীত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই আগামী এপ্রিলে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার জন্য রাজনৈতিক রণকৌশলের খসড়া তৈরি হবে। এত দিন রাজনৈতিক রণকৌশল ঠিক করতে আগে রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করত সিপিএম। এ বার আগে গত পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।
রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, গত পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক রণকৌশলে বলা হয়েছিল, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সিপিএমের নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু এই রাজনৈতিক রণকৌশল রূপায়ণে দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে এককাট্টা করা গেলেও পার্টির নিজস্ব প্রভাব, গণভিত্তির অধঃপতন ঠেকানো যায়নি। দলের অন্দরমহল কারাটের তদারকিতে তৈরি এই রাজনৈতিক পর্যালোচনাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইয়েচুরির সময়কালের সমালোচনা হিসেবেই দেখছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, বিজেপির মোকাবিলায় বেশি জোর দিতে হবে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের পর্যালোচনাতেও বলা হয়েছিল, তৃণমূলকে বেশি আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপির বিরোধিতায় খামতি থেকে গিয়েছে। তাই বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে। এই মতামতই পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক পর্যালোচনাতে উঠে এসেছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর নরম করবে।
২০১৫-য় সিপিএম কলকাতায় প্লেনাম ডেকে ঠিক করেছিল, সময়োপযোগী নতুন স্লোগান, কৌশল তৈরি করতে হবে। দলকে আরও গণবিপ্লবী পার্টিতে পরিণত করা হবে। সময়ের চাহিদা মেনে গড়ে তুলতে হবে গণআন্দোলন ও শ্রেণি আন্দোলন। রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কাজ এগোয়নি। ফলে পার্টি পুরনো স্লোগান, কর্মসূচিতেই রয়েছে। তাই সব আন্দোলন, প্রচারই আনুষ্ঠানিক, প্রথামাফিক কর্মসূচিতে আটকে থাকছে। বিশেষত ভোটের স্বার্থে গ্রামের গরিবদের জন্য লড়াইের বদলে গ্রামের বড়লোক, প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে সিপিএম আপসের মনোভাব নিচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার।