রাফালে ‘মোদী-যোগ’ ফাঁস সরকারি নোটে

রাফাল চুক্তি নিয়ে বিস্ফোরক সরকারি নোট প্রকাশ্যে এসে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আরও বিপদে ফেলে দিল। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

রাফাল চুক্তি নিয়ে বিস্ফোরক সরকারি নোট প্রকাশ্যে এসে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আরও বিপদে ফেলে দিল।

Advertisement

বিমান কেনা নিয়ে বোঝাপড়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতরও তৎপর ছিল— এই অভিযোগ বরাবর উড়িয়ে এসেছে সরকার। কিন্তু শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ২০১৫-র সেই নোট বলছে, ফ্রান্সের সঙ্গে দর কষাকষির সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর তাতে নাক গলিয়েছিল। পিএমও-র এই নাক গলানো নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারাই প্রবল আপত্তি তোলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলে— হয় পিএমও নাক গলানো বন্ধ করুক, না হলে নিজেরাই দর কষাকষি করুক। প্রতিরক্ষা সচিবের হাত ঘুরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের টেবিলেও পৌঁছেছিল।

রাফাল-চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রথম থেকেই সরব রাহুল গাঁধীও উজ্জীবিত নতুন অস্ত্র পেয়ে। তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোটই বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ফ্রান্সের সঙ্গে সমান্তরাল দর কষাকষি চালাচ্ছিলেন। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ নিজেই বলেছেন, মোদীই অনিল অম্বানীকে বরাত দেওয়ার শর্ত জোড়েন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোট স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওলাঁদ ঠিক কথা বলেছিলেন।’’ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, মোদী রাফাল দুর্নীতিতে দোষী। উনি ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিজের বন্ধু অনিল অম্বানীকে দিয়েছেন।

Advertisement

সবে মাত্র বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাহুল তথা কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছিলেন। অভিযোগ তুলেছিলেন, বিদেশি যুদ্ধাস্ত্র সংস্থার কর্পোরেট লড়াইয়ে ঘুঁটি হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। অন্য কোনও বিদেশি সংস্থাকে ফায়দা পাইয়ে দিতে কংগ্রেস রাফাল চুক্তি বাতিল করাতে চাইছে, এমন প্রশ্ন তোলেন মোদী। আজ রাহুলের পাল্টা প্রশ্ন, এই নোটে কোথাও কি কংগ্রেসের নাম রয়েছে? এটা অবশ্যই কর্পোরেট লড়াই। অনিল অম্বানীর কর্পোরেট সংস্থার প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের লড়াই। রাহুলের সাফ কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চোর। কড়া ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে চোর, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট!’’

রাফাল চুক্তিতে তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়। আদালতে মোদী সরকার হলফনামায় জানিয়েছিল, ফরাসি সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দলই। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতর যে আলোচনা চালিয়েছিল, তা মোদী সরকার আদালতকে বলেনি। রাহুলের প্রশ্ন— লুকিয়ে রাখা তথ্য জানলে কি সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিত? নতুন তথ্য সামনে আসায় সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনা করা উচিত বলে দাবি তুলেছেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ।

নতুন অস্ত্র হাতে পেয়ে আজ সকালেই সাংবাদিক বৈঠক করে মোদীকে আক্রমণ করেন রাহুল। এর পর কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধীরা সংসদে সরব হয়। দু’দফায় লোকসভা ও রাজ্যসভা মুলতুবি করে দিতে হয়। আক্রমণের মুখে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলায়নি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাজের অগ্রগতি নিয়ে খোঁজখবর করাটা নাক গলানো নয়।’’ তাঁর দাবি, ওই নোটেই তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিচ্ছে বলে ‘দেখে মনে হচ্ছে’।

কংগ্রেসের যুক্তি, পর্রীকরের এই ‘দেখে মনে হচ্ছে’ কথাতেই স্পষ্ট, পিএমও-র নাক গলানোর কথা তিনিও জানতেন না।

কিন্তু নির্মলার মন্ত্রকের নোট-ই বলছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর শুধু সমান্তরাল দর কষাকষি চালায়নি। রাফাল চুক্তিতে ফরাসি সরকারের ‘সার্বভৌম গ্যারান্টি’ বা ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ না দিলেও চলবে, এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবে রাফাল-চুক্তিতে শেষ পর্যন্ত সরকারি গ্যারান্টি মেলেনি। মিললে চুক্তি রূপায়ণে আইনি দায়বদ্ধতা থাকত ফরাসি সরকারের। তার বদলে ‘লেটার অফ কমফোর্ট’ মিলেছে। যাতে শুধু চুক্তি রূপায়ণে ‘নৈতিক দায়ের’ কথা বলা রয়েছে। তদানীন্তন প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহনকুমারও আজ মেনে নিয়েছেন— ওই নোটে শুধু রাফালের দাম নয়, সরকারি গ্যারান্টি না-থাকা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।

রাহুলের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’-এর জবাবে লোকসভায় মোদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘উল্টা চোর চৌকিদার কো ডাঁটে!’’ তা শুনে আজ রাহুলের মন্তব্য, ‘‘উনি কি নিজের কথা বলছেন? ওঁর কি দ্বৈত সত্তা তৈরি হয়েছে? নিজেকে একই সঙ্গে চোর ও চৌকিদার ভাবছেন? রাতে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় চৌকিদার হয়ে যান? আর দিনের বেলায় চোর!’’

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রবার্ট বঢরা-সহ গাঁধী পরিবারের লোকজন থেকে কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে বলেই কংগ্রেস এত বিচলিত। আজ রাহুলের মন্তব্য, ‘‘আমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমি বিচলিত? মোদীর দিকে দেখুন, কে বিচলিত।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘রবার্ট বঢরা, পি চিদম্বরম— যার বিরুদ্ধে খুশি তদন্ত করুন। কিন্তু রাফাল কেলেঙ্কারিরও তদন্ত হোক।’’ কংগ্রেসের ঘোষণা, তাদের সরকার হলে রাফাল চুক্তিতে এক দিকে যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরি করে তদন্ত হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে পুলিশি তদন্তও হবে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement