রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাত অব্যাহত।
সংঘাত অব্যাহত।
ওয়েবসাইটে এক ডেপুটি গভর্নরের বক্তব্য তুলে ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করাল, যাঁরা ধার শোধ করতে পারবেন না, তাঁদের উদ্ধার করা ব্যাঙ্কের কাজ নয়। অন্য দিকে আগামী ১৯ নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে গভর্নর উর্জিত পটেলকে ‘পথে আনতে’ আস্তিন গোটাচ্ছে সরকারও।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ তুলে গত মাসে ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য বলেছিলেন, ‘‘বাজারের রোষ টের পাবে সরকার।’’ তাঁকে গত কাল সেই ‘বাজারের রোষ’ নিয়েই খোঁচা দিয়ে ডলারের দাম কমা ও সেনসেক্সের উত্থানের হিসেব টুইট করেন কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাযচন্দ্র গর্গ। এর পর কাল রাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় আর এক ডেপুটি গভর্নর এন এস বিশ্বনাথনের একটি পুরনো বক্তৃতা। যেখানে ঋণখেলাপিদের নিয়ে ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
অর্থাৎ, রণং দেহি অবস্থানে অনড় দু’পক্ষই। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, ১৯ তারিখের বৈঠকে নর্থ ব্লকের কর্তারা ফের বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে সরব হবেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যাতে নতুন ঋণ বিলি নিয়ে ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উপরে জারি করা বিধিনিষেধ শিথিল করে, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি)-গুলির জন্য নগদের ব্যবস্থা করে এবং নিজের তহবিলে থাকা অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করে, তার জন্য গভর্নরের উপরে চাপ তৈরি করা হবে। কারণ স্পষ্ট। ভোটের আগে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক, ছোট-মাঝারি শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে সমস্যা হোক, নগদে টান পড়ুক— এটা সরকার চায় না। কিন্তু বিশ্বনাথন সাফ বলেছেন, ব্যাঙ্কের প্রাথমিক দায়বদ্ধতা আমানতকারীদের প্রতিই।
৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কি না, সেই বিতর্ক এখন চরমে। কেন্দ্রের দাবি, তারা শুধু পরামর্শই দিচ্ছে। কিন্তু আরএসএস-এর সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ হুঙ্কার দিচ্ছে, উর্জিত পথে আসুন। না হলে সরুন। প্রশ্ন উঠেছে, ১৯ নভেম্বরের বৈঠকের পরে গভর্নরের পদ থেকে উর্জিত সরে দাঁড়াবেন কি না। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ চাইছে, উর্জিত সরে দাঁড়ান। তার অর্থ, মোদী সরকারই তাঁকে সরাতে চাইছে। এটা রঘুরাম রাজন কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরকার চাইলে যে কোনও সময়ে গভর্নরকে সরিয়ে দিতে পারে। দু’দফা মিলিয়ে গভর্নর পদের মেয়াদ সাধারণত সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। প্রথম দফায় তিন বছর, দ্বিতীয়তে দুই। কিন্তু তার আগেও যে কোনও মুহূর্তে সরকার তাঁকে সরিয়ে দিতে পারে। কর্তাদের অবশ্য ধারণা, লোকসভা নির্বাচনের আগে উর্জিতকে সরাবে না কেন্দ্র। তিনি নিজে সরে গেলে আলাদা কথা। তবে তিনি সরবেন ভেবে সরকার সুর নরম করবে, এমনও নয়।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের যুদ্ধে মামলায় রাহুলেরা
বেশ কিছু বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিরোধ এখন তুঙ্গে। এক দিকে, ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নতুন ঋণ বিলি নিয়ে বিধিনিষেধে সরকারের আপত্তি। আবার ছোট-মাঝারি শিল্পের ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবেই, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য নগদ জোগাতে বলছে কেন্দ্র। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাণ্ডারে এখন প্রায় ৯.৬ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, এর থেকে অন্তত ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা তাদের কোষাগারে চাইছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রক এই অর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পুঁজির জোগানে কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু তাতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছে। কিন্তু স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা অশ্বিনী মহাজনের যুক্তি, ‘‘আমাদের দেশের আইন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন মেনে এ দেশের ব্যবস্থা চলবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা কী ভাবে বজায় রাখতে হয়, তা আমরা জানি।’’
কেন্দ্রের তিন দাবি
• ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নতুন ঋণ বিলির উপর বিধিনিষেধ শিথিল হোক।
• ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য নগদের ব্যবস্থা হোক।
• নিজের তহবিল থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।