লকডাউনে এমনই যানবাহনহীন রাস্তা সারা দেশে। ফলে কমেছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। —ফাইল চিত্র
উত্তরপ্রদেশের একটি শ্মশানে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি করে শবদাহ করা হত। কিন্তু ২২ মার্চ থেকে শুরু করে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে সাকুল্যে ৪৩টি মরদেহ দাহ করা হয়েছে।
বেঙ্গালুরু ও কলকাতায় পারলৌকিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের আগে গড়ে প্রতিদিন ৫টি করে মরদেহ সৎকারের কাজ হত। লকডাউনের পর থেকে গড়ে তিনটি করে বরাত পাচ্ছেন তাঁরা।
দেশের বিভিন্ন শহর থেকেই উঠে আসা এমন উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট লকডাউনের জেরে মৃত্যুর হার কমেছে।
দেশ জুড়ে টানা লকডাউনের জেরে রাস্তায় যানবাহন হাতে গোনা। ট্রেন বন্ধ। কমেছে অপরাধ। মদের দোকানও খুলছে না। এই সব কিছুর যোগফল, সারা দেশে মৃত্যুর হার কমেছে। বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর, পুর কর্তৃপক্ষ, শ্মশান, পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদনকারী সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করা কয়েকটি শহরের তথ্যে সেই ইঙ্গিতই মিলেছে।
সারা বিশ্বে যেখানে করোনাভাইরাসের জন্য মৃত্যুর হার বেড়েছে, ভারতে সেখানে এই উল্টো চিত্র। যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও আশাব্যাঞ্জক বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ওই সংস্থার তরফে কেন্দ্রের কাছে সারা ভারতের মৃত্যুর তথ্য চাওয়া হলেও তা দিতে অস্বীকার করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তথ্য দেয়নি বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা।
আরও পড়ুন: বিশ্রী ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই আপনার এত কৌশল: ফের তীব্র আক্রমণে ধনখড়
তবে একাধিক শহরের মৃতের পরিসংখ্যান থেকে বলা যায়, গোটা দেশেই মৃত্যুর হার কমেছে। কারণ হিসেবে চিকিৎসক, বিভিন্ন পুর কর্তৃপক্ষের মতে, তার অন্যতম প্রধান কারণ, পথ দুর্ঘটনা। লকডাউনের জেরে বাস, লরি থেকে শুরু করে যানবাহনের দুর্ঘটনা প্রায় বিরল ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনা নেই। পাশাপাশি অতিরিক্ত মদ্যপানের জেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। খুন-জখমের ঘটনাও প্রায় নেই বললেই চলে। ওই সংবাদ সংস্থার দাবি, গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের এপ্রিলে মুম্বইয়ে মৃত্যুর হার কমেছে ২১ শতাংশ। আমদাবাদে কমেছে ৬৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন: প্রতিনিধি পাঠাল রাজ্য, হাওড়া পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় দল
কলকাতা বেঙ্গালুরুতে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে যুক্ত ওই বেসরকারি সংস্থার প্রধান শ্রুতি রেড্ডি বলেন, ‘‘বিষয়টা আমাদের কাছে আশ্চর্যের। আগে যেখানে গড়ে পাঁচটা কাজ করতাম, এখন সেই সংখ্যা কমে হয়েছে তিন। তাই কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে, একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের নীচে আয় চলে গেলে মাইনে কাটা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে শুধুমাত্র পথদুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছিল ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৪০০ জনের। কিন্তু এ বছর সেটা কমবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রকের পদস্থ কর্তা পরেশকুমার গয়াল বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে আগের বছরের তুলনায় এ বছর অন্তত ১৫ শতাংশ পথ দুর্ঘটনা কমবে।’’ আবার অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্য, ‘‘পথ দুর্ঘটনা তো বটেই, সঙ্গে মদ্যপান ও ড্রাগে আসক্ত রোগী খুব কম আসছে।’’
উত্তরপ্রদেশের একটি শ্মশানের ইনচার্জ নীরজ কুমার বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন অন্তত ১০টা পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া দেহের সৎকার করতাম। সঙ্গে ছিল খুন হওয়া মৃতদেহ। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে শুধু স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হওয়া দেহই শ্মশানে আসছে।’’
আমদাবাদ পুর নিগমের আধিকারিকরা অবশ্য মনে করছে, লকডাউনের জেরে অনেক মৃত্যু সরকারি ভাবে নথিবদ্ধ হচ্ছে না। লকডাউন উঠে গেলে হয়তো আরও কিছু মৃত্যু নথিবদ্ধ হবে। যদিও আগের বছরের এই সময়ের কাছাকাছি যাবে, এমন মনে করছেন না তাঁরাও।