Coronavirus

করোনায় মৃত বোনের দেহ বদল! হল না শেষকৃত্য

বরেলীতে চিকিৎসা করিয়ে ফল না মেলায় দিল্লির এমসে গত ৪ জুলাই বোনকে ভর্তি করেছিলেন আমানউদ্দিন। সেই রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, বোনের করোনা ধরা পড়েছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৪:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা কেড়ে নিয়েছে বোনকে। কিন্তু সেই বোনের শেষকৃত্যটুকুও করতে পারলেন না উত্তরপ্রদেশের বরেলীর বাসিন্দা আমানউদ্দিন। কবরস্থানে বোনকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য তাঁর মুখ থেকে কাপড় সরিয়েই চমকে ওঠেন আমানউদ্দিন ও তাঁর গোটা পরিবার। এ তো অন্য মহিলা! জানা যায়, হাসপাতাল কর্মীদের গাফিলতিতে অন্য মৃতদেহ চলে এসেছে আমানউদ্দিনের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমানউদ্দিনের বোনের দেহ বদল হয়ে গিয়েছে এক জন মৃত হিন্দু মহিলার সঙ্গে! যাঁর তত ক্ষণে দাহও হয়ে গিয়েছে! মৃতদেহ বদলাবদলির এমন ঘটনায় তীব্র অস্বস্তিতে দিল্লি এমস। গাফিলতির অভিযোগে এমসের এক কর্মীকে বরখাস্ত ও আর এক জনকে সাসপেন্ড করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গড়া হয়েছে তদন্ত কমিটিও।

Advertisement

বরেলীতে চিকিৎসা করিয়ে ফল না মেলায় দিল্লির এমসে গত ৪ জুলাই বোনকে ভর্তি করেছিলেন আমানউদ্দিন। সেই রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, বোনের করোনা ধরা পড়েছে। সেই মতো তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের ট্রমা কেন্দ্রে। দু’দিন পরে ৬ জুলাই মারা যান আমানউদ্দিনের বোন। ঘটনাচক্রে ওই দিন গাজিয়াবাদের এক মহিলাও মারা যান করোনা সংক্রমণে। ৬ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরের দিন, অর্থাৎ ৭ জুলাই দুপুরে একেবারে সোজা কবরস্থানে মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে হাসপাতাল। অন্য দিকে, হিন্দু পরিবারটিকেও জানানো হয়, তাঁদের আত্মীয়ের মৃতদেহ সোজা পৌঁছে যাবে শ্মশানে। হাসপাতাল থেকে শ্মশান ঘুরে কবরস্থানে পৌঁছয় এমসের গাড়ি। সেখানেই মৃতার মুখের আবরণ সরিয়ে চমকে ওঠেন আমানউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ দেখেই বুঝতে পারি, এ অন্য মহিলা! এর পর টিকিট মিলিয়ে দেখি, তাতে অন্য নাম। গাড়ির চালক আমাদের জানান, ভুল করে মৃতদেহ বদলাবদলি হয়ে গিয়েছে। এখনই গিয়ে বোনের দেহ নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান চালক।’’

আরও পড়ুন: চিনা দখলে চার ফিঙ্গার নিয়েই চিন্তা ভারতের

Advertisement

গোটা দিন কবরস্থানে অপেক্ষার পরে সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন আমানউদ্দিন। হইচই পড়ে যায় গোটা হাসপাতাল জুড়ে। খবর যায় হিন্দু পরিবারটির কাছেও। তত ক্ষণে জানা যায়, যাঁদের কাছে আমানউদ্দিনের বোনের মৃতদেহ গিয়েছিল, তাঁরা সেটিকে নিজেদের আত্মীয় ভেবে দাহ করে ফেলেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ বিকালে হিন্দু পরিবারটির হাতে সৎকারের জন্য তাঁদের প্রকৃত আত্মীয়ের দেহটি তুলে দেওয়া হয়। হিন্দু পরিবারটিকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁদের সাড়া মেলেনি রাত পর্যন্ত। অস্বস্তির মুখে দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কাদের গাফিলতিতে ওই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখার জন্য অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান টি এস রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে এমস। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারও।

ন্যায় বিচারের আশায় আজ দিনভর হাসপাতালে পড়েছিলেন আমানউদ্দিন। অস্বস্তিতে পড়া এমস কর্তৃপক্ষ আমানউদ্দিনের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। দোষীদের শাস্তির দাবিতে তবু সরব আমানউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘আগাগোড়া ভুল বোঝাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশে অভিযোগ যাতে না জানাই, তার জন্য নানা জায়গা থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ ভগ্নিপতি আগেই মারা গিয়েছিল আমানউদ্দিনের। ফলে বাপ-মা হারা বোনের তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি কী করবেন, শিশুগুলিকে কী বোঝাবেন, তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement