Cyclone Tauktae

ঝড়ের শেষে শান্ত সমুদ্রে ভাসছে মৃতদেহ

সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ টেউটে সমুদ্রে ছেড়ে গুজরাতের ভাবনগরের অদূরে ডাঙায় ওঠা শুরু করার পরে তিন ঘণ্টা লাগে গোটা পদ্ধতি শেষ হতে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই, আহমেদাবাদ শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৭:২৯
Share:

মোদীর হেলিকপ্টার থেকে ক্যামেরাবন্দি ধ্বংসের ছবি।

ঘূর্ণিঝড় টাউটে গুজরাতের স্থলভূমিতে উঠে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরে আরব সাগর শান্ত হয়েছে। তার পরে সেখানকার জলে একের পর এক ভেসে উঠছে মানুষের দেহ। ঝড়ের মারে নোঙর ছিঁড়ে দিশাহীন ভেসে বেড়ানোর পরে ডুবে গিয়েছিল বোম্বে হাইয়ের তৈলকূপে তেল উত্তোলনে নিয়েজিত একটি বেসরকারি সংস্থার বার্জ ‘পাপা ৩০৫’। ঝড়ের সঙ্গে অসমসাহসী লড়াই চালিয়ে ১৪৬ জনকে উদ্ধার করেন তটরক্ষীরা। বাকি ৭৫ জনকে নিয়ে তলিয়ে যায় বি‌শালাকায় জলযানটি। তাদেরই ২২টি দেহ এ পর্যন্ত ভেসে উঠেছে।

Advertisement

৫৩ জন নিখোঁজের কেউ আর বেঁচে নেই বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নোঙর ছিঁড়ে ছুটে বেড়ানো আরও দু’টি বার্জকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তার একটিতে ১৩৭ জন এবং অন্যটিতে ২০১ জন আরোহী ছিলেন। বার্জ দু’টিকে নিরাপদে পাড়ে আনা গিয়েছে।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ টেউটে সমুদ্রে ছেড়ে গুজরাতের ভাবনগরের অদূরে ডাঙায় ওঠা শুরু করার পরে তিন ঘণ্টা লাগে গোটা পদ্ধতি শেষ হতে। ‘অতি প্রবল’ ঘর্ণিঝড় টাউটে-র তাণ্ডবে সেই সময়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় গুজরাতের ১২টি জেলা। বুধবার পর্যন্ত এ রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬। ঝড় আসার আগেই সমুদ্র ঘেঁষা জেলাগুলির নিচু এলাকা থেকে ২ লক্ষের বেশি মানুষকে সরিয়ে না-ফেললে বিপর্যয় অন্য মাত্রা নিত। গুজরাতে পৌঁছনোর আগেই চার রাজ্য কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন ও দিউয়ের তটভূমি তছনছ করে এসেছিল টাউটে। গুজরাতে স্থলভূমিতে উঠে তার প্রাবল্য ক্রমে কমে এলেও রাজস্থানের ৪টি জেলায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

Advertisement

টাউটের ধাক্কায় গুজরাত ও দিউয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হেলিকপ্টারে ঘুরে দেখছেন নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই

কার্যত দেশের পশ্চিম তটভূমির গোটাটাই টাউটে-র তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন গুজরাত ও দিউয়ের কিছু অংশে আকাশ-সফর করেন। কেবলমাত্র গুজরাতের ক্ষয়ক্ষতির জন্যই সে রাজ্যের বিজেপি সরকারকে প্রাথমিক ও তাৎক্ষণিক সাহায্য হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করলেন। জানান, কেন্দ্রীয় প্রতিনি‌ধি দল শীঘ্রই গুজরাত সফরে আসবে। তারা ক্ষয়ক্ষতির সবিস্তার চিত্র দেখে যাওয়ার পরে বিজয় রুপাণী সরকারকে আরও টাকা দেওয়া হবে। স্বভাবতই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে অন্য রাজ্যগুলিতে। গুজরাত মোদীর নিজের রাজ্য। তিনি সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মহারাষ্ট্রের দলিত সংগঠন বঞ্চিত বহুজন আগাড়ির সভাপতি প্রকাশ অম্বেদকর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মোদী কি শুধু গুজরাতের প্রধানমন্ত্রী? কেরল, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক— সব রাজ্য ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল, উনি শু‌ধু গুজরাত নিয়ে চিন্তিত?’

এ দিন দিল্লি থেকে ভাবনগর বিমানবন্দরে পৌঁছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী রুপাণীকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়েন মোদী। তার পরে আকাশ থেকে বিপর্যস্ত এলাকা দেখেন। পরে পিআইবি-র বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গুজরাতের ১২টি জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে সব চেয়ে বেশি। চাষবাসের ক্ষতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বেশি ক্ষতি হয়েছে আম ও কলা চাষের। গুজরাত-সহ সব রাজ্যে টাউটে-র তাণ্ডবে মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা করা এক কালীন সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেছেন মোদী। গুরুতর জখমদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা করে। কপ্টার সফর সেরে বিমানবন্দরে নেমে মুখ্যমন্ত্রী রুপাণী এবং মুখ্যসচিব অনিল মুখিমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদী। সেই বৈঠকে উদ্ধার ও ত্রাণের খুঁটিনাটি খোঁজ নেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement