প্রতিবাদ রাজধানীর রাস্তায়। ছবি: পিটিআই।
সামনে পড়ে মেয়ের নিথর দেহ। কিন্তু কাছে ঘেঁষতে দেননি অভিযুক্ত। বরং মেলা কান্না না জুড়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমোতে বলেন মেয়ের মাকে। থানায় খবর দিতে চাইলে অভিযুক্তের জবাব ছিল, ‘‘ভিক্ষা করে খাও। থানা, পুলিশ, কোর্ট কাছারির খরচ চালাবে কী করে? ’’ দিল্লিতে ন’বছরের দলিত শিশুকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। তার মধ্যেই ওই রাতে শ্মশানে অভিযুক্তের সঙ্গে নিজের এমনই কথোপকথন সামনে আনলেন নিহত শিশুটির মা।
শ্মশানে বসানো ঠান্ডা জলের মেশিন থেকে রবিবার সন্ধ্যায় জল আনতে গিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু তার পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও বাড়ি ফেরেনি সে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আচমকা স্থানীয়রা এসে তার মাকে জানায়, শ্মশানের পুরোহিত রাধেশ্যাম তাঁকে ডেকেছেন। সেখানে গিয়ে ওই মহিলা দেখেন, তাঁর শিশুর দেহ পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁকে জানান রাধেশ্যাম। কিন্তু তাঁকে মেয়ের দেহ ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
৯ বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে রাধেশ্যাম (৫৫) এবং তাঁর তিন সহযোগী, লক্ষ্মী নারায়ণ (৪৩), কুলদীপ (৬৩) এবং সেলিম (৪৯)আরও তিন জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেহ সৎকার করে দেওয়ায় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি অপরাধ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তাঁদের লাই ডিটেকশন এবং মাদক পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর খুনই করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিশুটির পরিবারের।
মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
সংবাদমাধ্যমে মেয়েটির মা বলেন, ‘‘পুরোহিত ডেকে পাঠিয়েছেন বলে ওই দিন সন্ধ্যায় কয়েক জন এসে আমাকে জানায়। ওখানে গিয়ে মেয়ের দেহ দেখে পাগলপারা অবস্থা হয় আমার। কিন্তু ঝাঁঝের সঙ্গে পুরোহিত বলেন, মেলা কান্না না জুড়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমোও। চেঁচামেচি, কান্নাকাটি কোরো না।’’
১০০-য় ফোন করে পুলিশে খবর দিতে বললেও, রাধেশ্যাম রাজি হননি বলে দাবি ওই মহিলার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কী করে মেয়ের এমন অবস্থা হল আমি জানতে চাই ওঁর কাছে। ১০০-য় ফোন করতে বলি। কিন্তু ঝাঁঝিয়ে ওঠেন উনি। পুলিশে খবর না দিয়ে মেয়ের দেহ সৎকার করতে জোরাজুরি করেন। উনি বলেন, পুলিশে খবর দিলে বছরের পর বছর মামলা চলবে। মেয়ের দেহ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কাটাছেঁড়া করা হবে। ডাক্তার এবং পুলিশ মিলে মেয়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেচে দেবে। আমার যেহেতু সামর্থ্য নেই, তাই উনিই মেয়ের সৎকার করে দেবেন।’’
ওই মহিলা আরও জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদই রাধেশ্যাম এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে মেয়ের সৎকার শুরু করে দেন। তাঁকে ও তাঁর গোটা পরিবারকে দূরে বসিয়ে রাখা হয়। সকালে এসে মেয়ের অস্থি নিয়ে যেতে বলন রাধেশ্যাম। মেয়েটির মা বলেন, ‘‘দু’ঘণ্টার মধ্যে সব মিটিয়ে ফেলা হয়। রাধেশ্যাম আমাকে বলেন, থানায় গেলে লম্বা মামলা চলবে, লোকজন এ নিয়ে কথা বলবে। তুমি পীর বাবার বাইরে ভিক্ষে করো। মামলার খরচই বা চালাবে কী করে! উপায় না দেখে ছুটে বেরিয়ে আত্মীয়দের খবর দিই। বালতি করে জল এনে সবাই মিলে চিতা নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই হয়ত পুলিশ প্রমাণ পাচ্ছে না।’’
কিন্তু পুলিশের কাছে খবর পৌঁছলেও, কোনও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা। তাঁর অভিযোগ, শ্মশান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁদেরই মারধর করে পুলিশ। স্বামীকে এবং তাঁকে আলাদা আলাদা কুঠুরিতে ভরে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ডেপুটি কমিশনারের ইঙ্গিত প্রতাপ সিংহের দাবি, ঠান্ডা জলের মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গিয়েছে, যা অভিযুক্তদের দাবির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। মেয়েটির পরিবারও প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা মেনে নিয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। আগামী দিনে অভিযুক্তদের জামাকাপড় পরীক্ষা করে দেখা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা পড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।