Cyclone

আমপানের শক্তি ছিল না, ১ প্রাণ কেড়ে স্তিমিত নিসর্গ

সমুদ্র-শহর আলিবাগে ঝড় আসার সময়ে বিদ্যুতের খুঁটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে দশরথ বাবু ওয়াঘমারে (৫৮) নামে এক প্রৌঢ়ের। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৫:০৩
Share:

ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের প্রথম ঝাপটায় উপড়ে পড়েছে গাছ। প্রায় উল্টে গিয়েছে ট্রাক। বুধবার মহারাষ্ট্রের আলিবাগে। ছবি: এএফপি।

দুই রাজ্যই তৈরি ছিল ‘নিসর্গের’ মুখোমুখি হতে। তবে সন্ধের আগেই মহারাষ্ট্র ও গুজরাত বুঝল, বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। একাধিক মুম্বইবাসী আনন্দবাজারকে জানালেন, বর্ষাকালের গোড়ার মতো বৃষ্টিতেই একটু ভিজেছে শহর। বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে। কোথাও কোথাও গাছ পড়েছে বা বাড়ির চাল উড়েছে, কিন্তু আমপানের তাণ্ডবের কাছে তা নগণ্য। সমুদ্র-শহর আলিবাগে যদিও ঝড় আসার সময়ে বিদ্যুতের খুঁটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে দশরথ বাবু ওয়াঘমারে (৫৮) নামে এক প্রৌঢ়ের।

Advertisement

আজ বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আলিবাগ উপকূলে আছড়ে পড়তে শুরু করে নিসর্গ। সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। সেই গতিবেগও দ্রুত কমেছে। মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে আলিবাগেই, বিদ্যুতের কিছু খুঁটি উপড়েছে, সমুদ্রতট এলাকায় উপড়েছে গাছ। কাঁচা বাড়িও ভেঙেছে। ক্রমশ বৃষ্টি নেমেছে মুম্বই, নবী মুম্বই, পুণে, ঠাণেতে। বৃষ্টির মধ্যে মুম্বইয়ে নামতে গিয়ে রানওয়ে থেকে পিছলে যায় একটি মালবাহী বিমান। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধই করে দেওয়া হয় মুম্বইয়ে। সময় ও যাত্রাপথ বদলায় কিছু বিশেষ ট্রেনের।

আজ বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সান্তাক্রুজ়ের বাসিন্দা শ্রাবণী ভাদুড়ি বললেন, ‘‘এর থেকে কালবৈশাখীর দাপট অনেক বেশি। এখন বৃষ্টি নেই। লোকজন রাস্তায় হাঁটছেন। এক-আধ ঘণ্টা পরে একটু হাওয়া দিচ্ছে।’’ তবে সান্তাক্রুজ়েরই একটি ঝুপড়িতে ঝোড়ো হাওয়ায় সিমেন্টের ব্লক চাপা পড়ে আহত হয়েছেন তিন জন। নবী মুম্বইয়ে বৃষ্টি একটু বেশি, জানালেন এরোলী-র বাসিন্দা সম্পূর্ণা মিত্র। দু’একটা গাছ পড়েছে নেরাল-এ। পুণের চিকি‌ৎসক রাণু রায় বললেন, ‘‘দুপুরে ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। এখন সুন্দর আবহাওয়া।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সেই বুধবার! শেষ পর্যন্ত রক্ষে, কলকাতার মতো তাণ্ডবে পড়তে হল না মুম্বইকে

আরও পড়ুন: দু’সপ্তাহেই করোনা-আক্রান্ত ১ লক্ষ, উদ্বেগ লকডাউনের নিয়ম শিথিলে

কী ভাবে বেঁচে গেল মুম্বই? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বললেন, ‘‘নিসর্গ স্থলভূমিতে ঢুকেছে মুম্বই থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এবং তা উত্তর-পূর্বে অর্থাৎ পুণের দিকে চলে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, স্থলভূমিতে ঢুকে নিসর্গ পশ্চিমঘাট পর্বতে ধাক্কা খেয়েছে এবং তাতে দ্রুত শক্তি ক্ষয় হয়েছে।’’ মৌসম ভবনের খবর, বিকেল সাড়ে ৪টের মধ্যেই নিসর্গ সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। স্থলভূমিতে ঢোকার সময়ে আমপানের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। নিসর্গের সেই শক্তি ছিল না।

আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ওমান-ইয়েমেনের মতো দেশের দিকে যায়। কিন্তু এ বার একটি উচ্চচাপ বলয়ের ঠেলায় ঝড় ওই দিকে যেতে পারেনি। উল্টে উপরের বায়ুস্তরের প্রভাবে (স্টিয়ারিং ফোর্স) সে মহারাষ্ট্র উপকূলে চলে এসেছিল। সেই স্টিয়ারিং ফোর্সই মুম্বইয়ের বদলে পুণের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে।

গুজরাতের ত্রাণ কমিশনার হর্ষদ পটেল জানান, উপকূলের আটটি জেলা থেকে ৬৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে তাঁরা সরিয়েছিলেন। ভালসাদ ও নভসারী জেলায় মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত সে রাজ্যে ঝড়বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনার খবর নেই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement