ছ’বছরের শিশু হতবাক হয়ে দেখেছিল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলা। ভেবেছিল, একদিন এই ঝড়কেই বশ করবে সে। ভবিষ্যতে বড় হয়ে সেই ভাবনাই সত্যি প্রমাণ করেছিল সে। দেশ এখন মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রকে চেনে ‘দ্য সাইক্লোন ম্যান’ নামে।
মৃত্যুঞ্জয়ের জন্ম ওড়িশার ভদ্রক জেলায়। ছোট থেকেই ঘূর্ণিঝড়ে বার বার নিজের জেলাকে বিধ্বস্ত হতে দেখেছেন তিনি। তাঁর বাবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলে প্রতিবেশীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতেন। সেখান থেকেই ভয় না পেয়ে প্রকৃতিকে ভালবাসার হাতেখড়ি মৃত্যুঞ্জয়ের।
পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর মৃত্যুঞ্জয় ডিআরডডিও-তে যোগ দেন জুনিয়র ফিজিসিস্ট হিসেবে। ১৯৮৮ সালে ভারতের প্রথম অগ্নি মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ পর্বে তিনিও শরিক ছিলেন বিজ্ঞানী দলে। সে সময় স্বয়ং এপিজে আব্দুল কালাম এসে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের মনের কোণে প্রকৃতির সঙ্গে, তার রূপবদলের প্রতি ভালবাসা রয়েই গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে তিনি পুণের আইএমডি-র অফিসে যোগ দেন। গত ২৮ বছর ধরে তিনি প্রথম সারির আবহবিদ। দেশের পাশাপাশি সম্মানিত হয়েছে অজস্র আন্তর্জাতিক সম্মানে।
২০১৯ সালে মৃত্যুঞ্জয় দিল্লির মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বসূরী ছিলেন কে জে রমেশ।
১৯৯৯ সালের ওড়িশায় সুপার সাইক্লোনের দুঃসহ স্মৃতি জীবনভর তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। এই দুর্যোগের পরেই তিনি হাওয়া অফিসকে আরও আধুনিক করে তোলার দাবি জানান।
‘ফায়ালিন’, ‘হুদহুদ’, ‘তিতলি’-সহ একাধিক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে মৃত্যুঞ্জয় এবং তাঁর সহকর্মীদের ভূমিকা দেশবাসীর কুর্নিশ আদায় করে নেয়। কারণ ঝড়ের গতিপ্রকৃতি ও গতিপথ নিয়ে নির্ভুল পূর্বাভাস সাহায্য করে প্রস্তুতি নিতে। ফলে বহু স্থানীয় বাসিন্দার জীবন রক্ষা সম্ভব হয়।
একই তৎপরতার ছবি ধরা পড়ে ২০১৯ সালে, ‘ফণী’ ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও। সাইক্লোন ম্যানের পূর্বাভাস সাহায্য করে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করতে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয় অনেকটাই।
কাজপাগল মৃত্যুঞ্জয় ছুটির দিনেও অফিসে যেতে ভালবাসেন। আধঘণ্টার জন্য হলেও তাঁকে যেতেই হবে অফিসে।
কাজের মধ্যে ডুবে থাকা এই আবহবিদের খাওয়াদাওয়া শৌখিন নন। তৃপ্তি করে খান বাড়ির তৈরি নিপাট খাবার। পছন্দ করেন ওড়িশায় তৈরি রসগোল্লাও।
প্রকৃতিকে ভালবেসে ঝড়কে মিতে করেছেন। ভয় পান না তার ভ্রূকুটিতে। তাই বলা হয়, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ও নাকি তাঁর কথা শোনে। তিনি যে গতিপথের পূর্বাভাস দেন, তার থেকে অন্য পথে এগোয় না ঝড়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করে নিজের ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামের সার্থকতা বজায় রেখেছেন দেশের ‘সাইক্লোন ম্যান’।