Home Ministry on Cyber Crime

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া নিয়ে’ চলছে সাইবার প্রতারণা, খুলেছে বেআইনি ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’-ও: কেন্দ্র

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়ার জন্য সমাজমাধ্যমে ওত পেতে বসে রয়েছে সাইবার প্রতারকেরা। মূলত ফেসবুক ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ চালায় তারা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৭
Share:

— ফাইল চিত্র।

‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ ঘিরে উদ্বেগের মাঝেই এ বার আরও এক সাইবার জালিয়াতি নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করল কেন্দ্র। অনলাইন প্রতারণার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় প্রতারকেরা নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে না। কারণ এতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই তৃতীয় কোনও ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। এগুলিকে অনেকটা ভাড়ায় নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বলা যায়। ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’-এর ক্ষেত্রেও টাকা হাতানোর সময় এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি এই ভাড়ায় নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বেআইনি ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ (অনলাইন লেনদেনের মাধ্যম) তৈরি করে ফেলেছে প্রতারকেরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্র এই ধরনের ‘ভা়ড়াটে’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। সেগুলি ব্যবহার করে অনলাইন লেনদেনের কিছু বেআইনি মাধ্যম তৈরি করে ফেলেছে প্রতারকেরা। গুজরাত পুলিশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ সম্প্রতি দেশের একাধিক প্রান্তে হানা দিয়েছিল। সেই অভিযান চলাকালীনই এই তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। মূলত সাইবার অপরাধের জন্যই এই ধরনের বেআইনি লেনদেন মাধ্যমগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

অনলাইন প্রতারণার জগতে ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের চল নতুন কিছু নয়। সাধারণত পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার নজর এড়াতে প্রতারণা চক্রের মাথারা এই ধরনের ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষের থেকেই ভাড়া নেওয়া হয় অ্যাকাউন্টগুলি। ধরে নেওয়া যাক, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি আসলে রয়েছে ‘ক’-এর নামে। কিন্তু সেটি ব্যবহার করছেন ‘খ’ নামের অন্য কোনও ব্যক্তি। কিছু শর্তের বিনিময়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রকৃত মালিকের থেকে সেগুলি ভাড়া নেয় প্রতারকেরা। ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত লেনদেন চালায় জালিয়াতেরা। পরিবর্তে প্রকৃত মালিককে নির্দিষ্ট কিছু পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়।

Advertisement

এই ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্টগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে অপরাধের টাকা হাতবদল হয়। সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া অপরাধের টাকার অঙ্ক দেশের মোট জিডিপির প্রায় ০.৭ শতাংশ। ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় চার হাজারের আশপাশে এই ধরনের ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেই ভাড়া নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি খোঁজে প্রতারকেরা। মূলত ব্যবহার হয় টেলিগ্রাম এবং ফেসবুক। কখনও ভুতুড়ে সংস্থা আবার কখনও কোনও ব্যক্তির নামে থাকা এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি সাধারণত বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। প্রতারণার কাজে ব্যবহারের জন্য এগুলিকেই আগে পছন্দ করে সাইবার জালিয়াতেরা।

এই অ্যাকাউন্টগুলিকে ব্যবহার করে অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের একাধিক বেআইনি মাধ্যম চালু করেছে প্রতারকেরা। লগ্নির ভুয়ো ওয়েবসাইট, কিংবা কোনও অনলাইন জুয়ার ভুয়ো ওয়েবসাইট, আবার কখনও শেয়ার কেনাবেচার ভুয়ো মাধ্যমে এই ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ ব্যবহার করে তারা। এক বার কেউ এই ফাঁদে পা দিয়ে টাকা ঢাললেই, নিমেষে তা পৌঁছে যায় সাইবার জালিয়াতদের ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। পরে আরও একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঘোরানো হয় সেই টাকা। এমন বেশ কয়েকটি অনলাইন লেনদেনের বেআইনি মাধ্যমের কথাও উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ‘পিস পে’, ‘আরটিএক্স পে’, ‘পোকো পে’, ‘আরপি পে’-সহ এমন আরও বেশ কিছু ভুয়ো ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ জালিয়াতেরা ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement