প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী মোকাবিলায় এ বার স্থানীয় যুবকদের নিয়োগ শুরু করল সিআরপিএফ। চলতি মাসের ১০ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত চলা নিয়োগের মাধ্যমে অন্তত চারশো জন স্থানীয় যুবককে আধাসেনায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন ওই শাখার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বস্তারিয়া ব্যাটালিয়ন’।
অতীতে বিজেপির রমন সিংহের সরকারের আমলে স্থানীয় যুবক ও আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের নিয়ে ‘সালওয়া জুড়ুম’ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। পরে সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উপর অত্যাচার, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার চরিতার্থ করে নিহতকে মাওবাদী বলে চালানো, গ্রামবাসীদের ভয় দেখানো, তোলা আদায়ের মতো অভিযোগ আসতে থাকায় ওই বাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় সরকার। পরবর্তী ধাপে এ বার ফের মাওবাদী দমনে স্থানীয়দের উপরে ভরসা করতে চাইছে কেন্দ্র। আধাসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, মূলত স্থানীয় এলাকা, মানুষের সঙ্গে পরিচিতি, স্থানীয় সংস্কৃতির সম্পর্কে ধারণা— এ সব দিক মাথায় রেখে ওই যুবকদের বাহিনীতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত। প্রাথমিক ভাবে হেড কনস্টেবল পদে যোগ দেবেন ওই যুবকেরা। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পরে তাঁদের অভিযানে নামানোর কথা ভাবা হয়েছে। বাহিনীর একটি সূত্রের বক্তব্য, মূলত খবর সংগ্রহের কাজেই ওই যুবকদের ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের মধ্যে দক্ষিণ ছত্তীসগঢ় এলাকাতেই মাওবাদীদের প্রভাব ভাল রকম রয়ে গিয়েছে। ঘন জঙ্গল, পাথুরে এলাকার সুযোগে এখনও ওই এলাকায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম মাওবাদীরা। তাই ওই এলাকায় মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার লক্ষ্যে মাওবাদী অধ্যুষিত বিজাপুর, দন্তেওয়াড়া ও সুকমা— ওই তিন জেলা থেকেই যুবকদের মূলত নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আধাসেনা সূত্রের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে নিয়োগে এক দিকে রোজগারের সুযোগ ও অন্য দিকে তথ্য সংগ্রহের কথা মাথায় রেখে ওই শাখা গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা থমকে যায় শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করায়। কারণ, নিয়োগের শর্ত ছিল, বাহিনীতে যোগদানের সময়ে ন্যূনতম দশম বা মাধ্যমিক সমতুল্য কোনও পরীক্ষা পাশ করতে হবে প্রার্থীকে। সেই শর্ত পূরণ না-হওয়ায় বারংবার আটকে যাচ্ছিলেন স্থানীয় জনজাতি সমাজের যুবকেরা।
তাই সেই নিয়মে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। নতুন নিয়মে কাজে যোগদানের সময়ে কোনও যুবক দশম পাশ না হলেও তাঁকে বাহিনীতে যোগদানের প্রশ্নে ছাড় দেওয়ার হবে। কিন্তু শর্ত হল, কাজে যোগদানের পরে যত দিন না তিনি মাধ্যমিক বা সমতুল্য কোনও পরীক্ষা পাশ করবেন, ততদিন ওই যুবক বাহিনীতে স্থায়ী হবেন না। মাধ্যমিকের শংসাপত্রের ভিত্তিতেই ওই যুবকদের স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, ওই যুবকেরা যাতে মাধ্যমিক মানের পরীক্ষা পাশ করতে পারেন, তার জন্য পরীক্ষার্থীদের বই, শিক্ষক, স্টাডি মেটেরিয়াল দিয়ে সব ধরনের সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।