প্রতীকী ছবি।
হালকা একটা ‘বিপ বিপ’ শব্দ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে জ্বলছে-নিভছে কিছু লাল-সাদা আলো। বস্তারের জঙ্গলের বেশ গভীরে থাকা দু’দুটি সিআরপি ক্যাম্পে পাহারাদার জওয়ানরা আকাশে খুব নিচুতে চাকতির মতো কিছু উড়তে দেখেছেন। কিন্তু বন্দুক তুলে তাক করা মাত্র সেটি উধাও হয়ে গিয়েছে।
ছত্তীসগঢ়ের দক্ষিণ বস্তার অঞ্চলে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে কিস্তারাম ও পাল্লোডির দু’টি সিআরপি ক্যাম্পে এক মাসের মধ্যে চার বার এমন উড়ন্ত ড্রোন নজরে আসার পরে নিরাপত্তা বাহিনী এক রকম নিশ্চিত, নজরদারি বা অন্য উদ্দেশ্যে মাওবাদীরাই এই ড্রোন ওড়াচ্ছে। জঙ্গলের বেশ গভীরেই এই দুটি ক্যাম্প। সেখানে টেলি-যোগাযোগ ও সড়ক-যোগাযোগ, দুটোই অপর্যাপ্ত। এমন এলাকায় সম্ভাব্য হামলার নতুন হুঁশিয়ারি তো জারি হয়েছেই, এ ধরনের ড্রোন দেখা মাত্র গুলি করে নামানোর জন্য বস্তারের সব আধাসেনা ক্যাম্পে নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
গোয়েন্দারা খবর নিয়ে দেখেছেন, মুম্বইয়ের একটি দোকান থেকে সম্ভবত এই ড্রোন কিনেছে মাওবাদীরা। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছে, নজরদারি ছাড়া নাশকতার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ড্রোনগুলি। চার পা-ওয়ালা এই ড্রোনে ক্যামেরা লাগিয়ে আকাশ থেকে ছবি তোলা যায়। ‘নাইটভিশন’ ক্যামেরা ব্যবহার করে সিআরপি ক্যাম্পের ভেতরের গতবিধি জানা খুবই সম্ভব। আবার ছোট বাক্স বা প্যাকেট উড়িয়ে কোথাও ফেলাও যায় এই ড্রোন দিয়ে। অন্ধকারে ড্রোন উড়িয়ে ক্যাম্পের মধ্যে বিস্ফোরক বা গ্রেনেড ফেলাও সম্ভব। তবে প্রত্যক্ষদর্শী জওয়ানদের চাক্ষুষ বর্ণনা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অন্ধকারে দেখা যাওয়া ড্রোনগুলি আকারে বেশ ছোট, হালকা এবং কমদামী। ক্যাম্পগুলির মধ্যে নজরদারির কাজেই সম্ভবত সেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘‘শত্রুর ড্রোন দেখা মাত্র গুলি করে নামানোর নীতি নিরাপত্তা বাহিনীর বহাল আছে। নির্দেশ জারি করে আধাসেনাদের সেটাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: সচেতনতা বাড়লেও অঙ্গদানে ব্যতিক্রমী ভাবনা-হিমাংশুরা
গোয়েন্দাদের হিসেবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে দেশে প্রায় ৬ লক্ষ ড্রোন রয়েছে, যা নিরাপত্তার পক্ষে হুমকি। এগুলি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নজরদারি বা নাশকতা চালানো সম্ভব। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি তাই ‘স্কাই ফেন্স’ বা লেজ়ার নিয়ন্ত্রিত ‘ড্রোন গান’ চেয়ে সরকারের কাছে দরবার করে রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বস্তারে সিআরপি ক্যাম্পের ওপরে ড্রোন দেখা যাওয়ায় এ বিষয়ে তৎপরতা বাড়বে।