গুজরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পথযাত্রা। ছবি: পিটিআই।
হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদের যুগ্ম সড়ক কাঁপিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পথযাত্রার সাক্ষী থাকল রাজধানী। চলতি বছরে সেমিফাইনাল ১০ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে। আগামী বছর ফাইনাল লোকসভায়। তার আগে গুজরাতে বিপুল জয়ের উদ্যাপনে সশব্দ বার্তা দিতেই মোদীর এই পথযাত্রা বলে মনে করছেন অনেকে।
আজ বিকেল ৩টে থেকে রাস্তায় নামার কথা ছিল মোদীর। সংসদ মার্গ, অশোক রোড, যন্তরমন্তর রোড বরাবর মানুষের ঢল নামে বেলা গড়ানোর পর থেকেই। হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছিলেন দলে দলে লোক। এসেছেন রাম, রাবণ সাজা পাংশু মুখের খেপ খাটা শিল্পী। সামান্য ব্যবধানে তৈরি হয়েছে একের পর এক ছোট মঞ্চ। স্থানীয় শিল্পীরা তার উপরে উঠে দম ফাটিয়ে ‘মোদী’ এবং ‘হিন্দুস্থান’ বলে আকাশ কাঁপানো নামধ্বনি করছেন। সঙ্গে অযোধ্যায় রামমন্দির এবং কাশী করিডর সাজানোয় মোদীর অবদান-কীর্তন। তার সঙ্গে বাছাই করা বলিউডি ছবির জাতীয়তাবাদ মথিত সঙ্গীত।
কাড়া নাকাড়া, ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা, করতাল কিছুই বাকি নেই। সব মিলিয়ে শব্দব্রহ্ম। টন টন ফুলের পাপড়ির ব্যাগ কাঁধে বয়ে এনে দুপুর থেকেই রাস্তার দু’ধারে অপেক্ষমাণ বিজেপি কর্মীরা। পুষ্পবৃষ্টিতে যেন এক ইঞ্চিও খামতি না থাকে। তাঁদের হাত থেকে মাটিতে পড়া ফুলে হলুদ ও গোলাপিতে মুহূর্তে বদলে গিয়েছে মোদীর কনভয়ের টায়ারের নিচের রং। পরিবেশকে আরও পৌরাণিক করে প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথের ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তির-ধনুক নিয়ে রাম-হনুমান। মাঝে মধ্যে তাঁরা থামছেন দূর থেকে মোদীকে দেখতে আসা জনতার নিজস্বী (সেলফি) তোলার আবদারে! নিজস্বীর ধুম মোদীর পেল্লায় কাটআউটের সঙ্গেও।
কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ জানান, আজ এই মহা আড়ম্বরের পিছনে রয়েছে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার ফলে তৈরি হওয়া আতঙ্ক। কংগ্রেসের দাবি, শুধু দক্ষিণ ভারত নয়, দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশেও যে-ভাবে মানুষ রাহুলের যাত্রায় ভিড় জমিয়েছেন, তাতে চিন্তিত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তার মোকাবিলা করতেই প্রচুর ঢাকঢোল পিটিয়ে আজ মোদীর এই যাত্রা। পাশাপাশি এ-ও বলা হচ্ছে, আড়ম্বরের ঘটা থাকলেও মোদী পায়ে হাঁটেননি এবং রাহুল যখন দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারত পর্যন্ত চষে ফেললেন, মোদীর এই যাত্রা কয়েক কিলোমিটার মাত্র। ফলে দু’টির মধ্যে তুলনাও হয় না।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শুধু রাহুল নয়, দিল্লিতে এই বর্ণাঢ্য আসর জমিয়ে মোদী ১০ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে গোটা দেশে বার্তা দিতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে দিল্লির আপ সরকারের নাকের ডগায় আজ গেরুয়া বাহিনীর এই রণহুঙ্কারও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত মাসেই দিল্লির পুরভোটে আপের কাছে পরাজিত হয় বিজেপি।