মেঘলা থাকায় পাক রেডার ধরতে পারবে না ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান, বলেছিলেন মোদী। —ফাইল চিত্র
বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে জঙ্গির মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশার মেঘ কাটেনি। তার মধ্যেই এ বার ‘অভিনব’ তথ্য দিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তথ্য মোদীর মন্তব্যের নির্যাস, তিনিই সেনাকর্তাদের বলেছিলেন, আকাশ মেঘলা থাকায় ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান পাকিস্তানের রেডার ধরতে পারবে না। মোদীর এই ‘মেঘতত্ত্ব’ সামনে আসার পরই টুইটারে ব্যাপক শোরগোল। আমজনতা থেকে রাজনৈতিক নেতা, মোদীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি অনেকে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে, বিজেপির পক্ষ থেকে টুইট করেও তা তুলে নেওয়া হয়। তবে তার স্ক্রিন শট এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর পর থেকেই ভারত-পাক সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার রেশ ধরেই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশে ঢুকে বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা ফেলে আসে ভারতীয় বায়ুসেনা। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নিয়ে এই ঘটনা নিয়েই এই মেঘলা আকাশের তত্ব এবং তথ্য দেন।
ঠিক কী বলেছেন মোদী? সাক্ষাৎকারে মোদীর বক্তব্য, ‘‘হঠাৎই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায় (২৬ জানুয়ারি বালাকোটে হামলা চালানোর দিন)। আকাশে মেঘ ছিল... ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। সন্দেহ ছিল আমরা (বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান) মেঘের মধ্যে দিতে যেতে পারব কিনা। পর্যালোচনার সময় (বালাকোটে অভিযান) মোটের উপর মতামত ছিল, দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিনা। আমার মনে দু’টি বিষয় ছিল। এক, গোপনীয়তা..., দ্বিতীয়ত, আমি বলেছিলাম, আমি বিজ্ঞানী নই।’’
এর পরই মেঘলা আকাশের তত্ত্ব দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আমি বললাম, আকাশে প্রচুর মেঘ এবং বৃষ্টি। এটার সুবিধাও আছে। আমি খালি চোখে যা বুঝি, মেঘ আমাদের সুবিধাও দিতে পারে। আমরা রেডারকে ফাঁকি দিতে পারি। সবাই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমি বলি, মেঘ আছে, চলুই এগিয়ে যাই।’’
আরও পডু়ন: ভারতীকে ঘিরে বিক্ষোভ, কেশপুরে শূন্যে গুলি-লাঠিচার্জ কেন্দ্রীয় বাহিনীর, পরপর গাড়ি ভাঙচুর
কিন্তু বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মেই আকাশে মেঘ থাকা বা না থাকার উপর রেডারে বিমানের সিগন্যাল পাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ রেডার কাজ করে ‘রেডিয়ো ওয়েভ’-এর মাধ্যমে। মেঘ বৃষ্টি এই রেডিয়ো ওয়েভ-এ কোনও প্রভাব ফেলতে বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না। ফলে যে কোনও পরিবেশেই আকাশে বিমান বা যুদ্ধবিমানের গতিবিধি ধরতে পারে রেডার।
স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর এই মন্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তুমুল চর্চা। প্রচুর পোস্ট, কমেন্টস। সেগুলির অধিকাংশই মোদীকে সমালোচনা করে। রয়েছে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, এমনকি, উপহাসও। অনেকেই তির্যক বাক্যবাণে বিঁধেছেন মোদীকে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা তুচ্ছ বিষয় নয়। মোদীর এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ক্ষতিকারক। এই রকম একজনও দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।’’ কেউ লিখেছেন, ‘হাস্যকর’। কেউ আবার বলেছেন, ‘‘এ ভাবেই নোটবন্দির সময় বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দেননি মোদী।’’
আরও পড়ুন: লাইভ: ভোট দিলেন রাষ্ট্রপতি, দিল্লিতে বুথে ১১১ বছরের প্রবীণতম ভোটারও
মোদীর সাক্ষাৎকারের এই অংশটি বিজেপির তরফে টুইটারেও ফলাও করে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এমন এমন সব ই-বোমা পড়তে শুরু করে যে, সেই টুইট ডিলিটও করে দেওয়া হয়। তবে অনেকেই স্ক্রিন শট নিয়ে রেখেছিলেন। ফলে ওয়েব-দুনিয়া থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারেনি সেই টুইট। সেটা নিয়েই এখনও সরগরম টুইটার-ফেসবুক। খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রসবোধের পরিচয় দিয়েছেন ওমর আবদুল্লা, ‘‘পাকিস্তানি রেডার মেঘ ভেদ করে সিগন্যাল ধরতে পারে না। ভবিষ্যতে এয়ার স্ট্রাইকের ক্ষেত্রে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!’’ আর টুইট মুছে দেওয়া নিয়ে তাঁর খোঁচা, ‘‘মনে হচ্ছে, মেঘের আড়ালে এই টুইটও হারিয়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস স্ক্রিন শটটা ছিল।’’
যদিও বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডলে ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে একাধিক পোস্ট রয়েছে। একটি টুইটে সাক্ষাৎকারের ওই অংশ দিয়ে বলা হয়েছে, বালাকোটে বায়ুসেনার হামলার প্রকৃত তথ্য। পুরো সাক্ষাৎকারও পোস্ট করা হয়েছে টুইটারে। সেখানে অবশ্য বেশিরভাগই ‘চৌকিদার’দের টুইট এবং তাতে মোদীর প্রশংসাই ঝরে পড়েছে।