অন্ধকারের কাহিনি কাজে লাগতো আলোর গুরুত্ব বোঝাতে। এখন বৃহত্তর বিপদের সামনে পুরনো অন্ধকারও ফিকে!
বাংলার সিদ্ধার্থ রায়ের মতো ত্রিপুরায় সুধীররঞ্জন মজুমদার, সমীর বর্মণদের আমলে কংগ্রেস কেমন অন্ধকারের রাজত্ব চালিয়েছিল, সেই ইতিহাস ছিল বাম শাসনের অন্যতম ভিত্তি। জাতীয় স্তরেও কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় মন খুলে সায় দেয়নি ত্রিপুরা সিপিএম। কিন্তু এখন? গেরুয়া ঝড়ের মুখোমুখি হয়ে সিপিএম আর কংগ্রেস এক সুর! কংগ্রেস তার অস্তিত্ব ত্রিপুরায় টিকিয়ে রাখুক, মনেপ্রাণে চাইছে সিপিএম।
গত কয়েক বছরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব ক্রমশ বিলীন হয়েছে। প্রথমে তৃণমূল, পরে বিজেপি-তে নাম লিখিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যখন অদূরে, পদ এবং টিকিট-প্রত্যাশীদের নিয়ে অশান্তি ঘনীভূত হচ্ছে বিজেপি-র অন্দরে। বিজেপি এবং তৃণমূলেও প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ার ক্ষোভে কংগ্রেসে ফিরতে চাইছেন নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ। উদয়পুর হোক বা সোনামুড়া— কংগ্রেসে ‘ঘর ওয়াপসি’র সে সব খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে সিপিএমের মুখপত্র।
নির্বাচনী পাটিগণিতের স্বাভাবিক শর্তে, বিরোধী ভোট যত ভাগাভাগি হবে, শাসকের তত স্বস্তি। ত্রিপুরায় আরএসএসের চাষ করা জমিতে ফসল তুলে বিজেপি যদি কংগ্রেস-তৃণমূলকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে বিরোধী ভোট নিজেদের ঘরে টেনে নেয়, তাতে সিপিএমেরই চিন্তা বাড়বে। তার চেয়ে কংগ্রেস অল্প ভোট ধরে রাখলেও তাদের লাভ। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসের এখন আছে বলতে ৫-৬% ভোট। মাঝখানে ওরা কিছুই করছিল না। এখন আবার অন্য রাজ্য থেকে নেতারা আসছেন, কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।’’
সিপিএম নেতারা যে তৎপরতার কথা বলছেন, তার ইঙ্গিত দিয়ে কর্মসূচিও নিচ্ছে কংগ্রেস। সামনেই যেমন তাদের উপজাতি শাখার আয়োজনে রাজভবন অভিযান। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের দৌলতে উপজাতি কল্যাণের কাজ যে ভাবে ব্যাহত হচ্ছে, মূলত তার প্রতিবাদেই ওই কর্মসূচি। সিপিএমের সুরেই কংগ্রেসের অভিযোগ, ত্রিপুরায় জাতি-উপজাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গোলমাল পাকাতে চাইছে বিজেপি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বিধায়ক বীরজিৎ সিংহের দাবি, ‘‘অসম, মণিপুর বা মিজোরামে যা সম্ভব, ত্রিপুরায় হইচই করেও বিজেপি সেটা করতে পারবে না। দীর্ঘ কমিউনিস্ট শাসনের ফলে এখানে উপজাতি মানুষও রাজনীতি সচেতন। তাঁরা পরিষ্কার বলে দেন, তাঁরা সিপিএম করেন বা কংগ্রেস করেন। বিজেপি-র কোনও স্থান নেই।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশের বক্তব্য, ‘‘পার্বত্য এলাকায় আরএসএসের পুরনো সংগঠন ছিল ঠিকই। কিন্তু উপজাতিদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে বিজেপি যে ভাবে সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে, তাতে শেষ পর্যন্ত ওদের লাভ হবে না।’’ উপজাতিদের মধ্যে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ অংশ এবং রাজ্যে মোট ৯% মুসলিম ভোটে ভরসা রাখছে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই।
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল ঘুরে গেরুয়া শিবিরে ভিড়েছেন সুদীপ রায়বর্মণ-সহ যে ৬ বিধায়ক, তাঁদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-র সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিধানসভা। কিন্তু কারা বিধানসভা ভোটে টিকিট পাবেন, তা নিয়ে আদি ও নব্য বিজেপি-র দ্বন্দ্ব উদয়পুর, ধর্মনগরে রাস্তায় নেমেছে। তাই আশা হারাচ্ছে না কংগ্রেস। সঙ্গে সিপিএমও!