প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস, আইএসএফের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চা তৈরি করে বিকল্প সরকারের ডাক দিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন লঙ্ঘন করেছিল বলে আগেই রায় দিয়েছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। ভবিষ্যতে সেই ভুল যেন আর না হয়, তা নিশ্চিত করতে আগামী পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়ায় বলে দেওয়া হল, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম ‘রাজনৈতিক জোট’ হবে না।
আজ আগামী এপ্রিলের পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “আমরা গত পার্টি কংগ্রেসে বলেছিলাম, কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে প্রয়োজনে নির্বাচনী বোঝাপড়া, আসন সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে ফ্রন্টের ডাক দেওয়া হয়েছিল।”
এই ভুলের পুনরাবৃত্তি রুখতে আগামী পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়ায় বলা হয়েছে, গত পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, ক্ষমতায় থাকায় এবং আরএসএসের সঙ্গে তার মূলগত যোগের ফলে বিজেপিই এখন মূল বিপদ। তাই বিজেপি ও কংগ্রেসকে সমান বিপদ বলে মানা যায় না। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম রাজনৈতিক জোট হতে পারে না।
সিপিএম এ বারের পার্টি কংগ্রেসেও আগের মতোই বিজেপিকে হারানোর ডাক দিচ্ছে। নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বলা হয়েছে, যখন যেমন নির্বাচন হবে, তখন বিজেপি-বিরোধী সমস্ত ভোটকে যত বেশি সম্ভব এককাট্টা করতে যথোপযুক্ত নির্বাচনী কৌশল নেওয়া হবে। কংগ্রেস দুর্বল হয়ে গিয়ে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলকে এককাট্টা করতে পারছে না বলেও সিপিএমের মত।
বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে একত্র করার ডাক দিলেও ইয়েচুরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পড়ছে না। ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, সিপিএমের সম্পর্কে কোন দলের কী মনোভাব, তার উপরেও এই বিষয়টি নির্ভর করছে। রাজনৈতিক প্রস্তাবে তৃণমূলের সম্পর্কে বলা হয়েছে, এক সময় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র অংশ তৃণমূল আজ বিজেপির বিরুদ্ধে। সিপিএম বিরোধী ও বাম বিরোধী নীতি থেকে তৃণমূল সরেনি। এখন তৃণমূল জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী শক্তির নেতা হয়ে উঠতে চাইছে।
কৃষক আন্দোলনের সাফল্যকে সামনে রেখে এ বার শুধু হিন্দুত্বের প্রশ্নে নয়, মোদী সরকারের আর্থিক নীতি, বিশেষত শিল্পপতিদের সুবিধা করে দেওয়া, তাদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেওয়ার বিরোধিতার দিকেও সিপিএম এ বার জোর দিচ্ছে। তার সঙ্গে আগের মতোই পার্টিকে মজবুত করা, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা, যুব-মহিলাদের দলে টানা, সদস্যদের গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া ও বাম ঐক্যকে জোরদার করার কথা বলা হয়েছে রাজনৈতিক প্রস্তাবে।