বাম-শাসিত সরকারের জন্য কাজের রিপোর্ট দলের কাছে পেশ করার রূপরেখা বেঁধে দিল সিপিএম। প্রতীকী ছবি।
কাজ করে সরকার। মানুষের কাছে সেই কাজের খতিয়ান নিয়ে যাওয়া বা পাল্টা প্রচারের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দলের। এ বার থেকে বাম-শাসিত সরকারের জন্য কাজের রিপোর্ট দলের কাছে পেশ করার রূপরেখা বেঁধে দিল সিপিএম। বাম-শাসিত রাজ্য কেরলেই সিপিএমের এই দলীয় ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। সিপিএম নেতৃত্বের আশা, ত্রিপুরায় যে ভোটের ধারা দেখা গিয়েছে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে যা রিপোর্ট এসেছে, তার প্রেক্ষিতে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস জোটের সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবে তেমন ঘটলে সেখানেও দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একই নীতি কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়েছে সিপিএম।
পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের রেওয়াজ ভেঙে কেরলে ২০২১ সালে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছিল এলডিএফ সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের দ্বিতীয় ইনিংসে সরকারি নানা প্রকল্পের কাজ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। ‘লাইফ মিশন’ বা মাঝারি দ্রুতগামী রেল যোগাযোগের ‘সিলভারলাইন’ প্রকল্প ঘিরে বিস্তর বিতর্কও বেধেছে। সিপিএম সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষিতেই রূপরেখা তৈরি করে দিয়ে সরকারের জন্য তিন মাস অন্তর কাজের রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বা অন্যান্য কারণে কোন কাজ কতটা এগোনো সম্ভব, তার একটা আগাম আন্দাজ দিয়ে রাখার কথাও ওই রূপরেখায় বলা হয়েছে। তিন মাসে এক বার করে ওই রিপোর্ট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব, এমনই ঠিক হয়েছে।
কেরলে সরকার থাকায় এখন দলের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়টি দক্ষিণী ওই রাজ্যে সামনে এলেও অতীতে বাংলার অভিজ্ঞতাও সিপিএমের অন্দরে আলোচনায় এসেছে। কৃষির ভিত্তিতে শিল্পের স্লোগান দিয়েই সপ্তম বারের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় ফিরেছিল বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তদানীন্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন শিল্পায়নের লক্ষ্যে এগোনোর জন্য দলের প্রাথমিক অনুমোদনও পেয়েছিলেন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার সালিম গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি বা প্রকল্পের জন্য জমি ও উচ্ছেদের প্রসঙ্গ আসার পরে দলের মধ্যেই নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ জন্ম নিতে শুরু করে। একেবারে পলিটব্যুরো স্তরের ‘কট্টরপন্থী’ নেতারা সেই সময়ে বাংলায় বাম সরকারের কাজ সম্পর্কে সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। সরকার ও দলের সমন্বয়ের প্রশ্নে তখন বিস্তর আলোচনা হয়েছিল দলে। তার পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে মন্ত্রিসভার সিপিএম সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসে কাজের মূল্যায়ন করা এবং পরামর্শ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। পরের নির্বাচনে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাওয়ায় বাংলায় সেই প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ইতি পড়ে। কেরলে নতুন করে সেই কাজই করতে হচ্ছে।
বিজয়ন নিজে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হলেও সে রাজ্যে তাঁর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যই নতুন। নির্বাচনে নতুন মুখকে প্রাধান্য দেওয়াই এখন সিপিএমের নীতি। কেরলে ২০২১ সালে সেই পথেই সাফল্য এসেছে, এ বার ত্রিপুরাতেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভোটে দাঁড়াননি। সিপিএম সূত্রের মতে, নতুন মুখ নিয়ে কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা হবেই। কেরলে এলডিএফের বিগত সরকারের সময়ে বছরে এক বার করে কাজের মূল্যায়ন সংক্রান্ত আলোচনা হত দলের সঙ্গে। এখন থেকে নিয়মিত রিপোর্ট নিয়ে সমন্বয়ের প্রক্রিয়া আরও ‘মসৃণ’ করার চেষ্টা হবে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘বৃহত্তর অর্থে দলের নীতি মেনেই সরকার চলে। কিন্তু সরকার চালানোর অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, কিছু কাজ সরকারি বা প্রশাসনিক স্তরে হয়ে যায়, যা সব সময়ে দলের নজরে থাকে না। অথচ রাজনৈতিক ভাবে দলকে জবাবদিহি করতে হয়। সেই জন্যই দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।’’