সিপিএমের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট। ছবি: পিটিআই।
এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনের চাকরি ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়। ২২ বছরের তরুণী বৃন্দা দাসের মাথায় তখন একটাই লক্ষ্য, সিপিএম-এ যোগ দিতে হবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যোগাযোগ হয়েছিল ছাত্র ফেডারেশনের জনপ্রিয় নেতা বিমান বসুর সঙ্গে। বিমান কথাবার্তা বলার আগে চা, গরম শিঙাড়া খাইয়েছিলেন। তার পরে নিয়ে গিয়েছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের কাছে। চুরুটের ধোঁয়ার আড়াল থেকে প্রমোদ টানা দু’দিন ধরে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, কেন এক জন ২২ বছরের তরুণী তিন বছর লন্ডনের চাকরির পরে কলকাতায় এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছে! দু’দিন ‘ইন্টারভিউ’-এর পরে বৃন্দাকে বলেছিলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনে কাজ করতে হবে। তার পরে দেখা যাবে, পার্টির সেই তরুণীকে প্রয়োজন কি না। সেই তরুণীও আর পার্টিতে থাকতে চায় কি না!
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এখন তরুণ প্রজন্মের কাঁধে ভর করে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। সে দিনের বৃন্দা দাস, আজকের সিপিএমের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট তাঁর সদ্য প্রকাশিত স্মৃতিকথায় দেখিয়েছেন, প্রমোদ দাশগুপ্তের মতো সিপিএমের প্রবীণ নেতারা কমিউনিস্ট-বিরোধী সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে কী ভাবে সংগঠন গড়ে তুলতেন। কী
ভাবে তরুণদের মধ্যে থেকে ছেঁকে পরবর্তী প্রজন্মের নেতানেত্রীদের তুলে আনতেন। দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বৃন্দার এই স্মৃতিকথা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সিপিএমের অন্দরমহল।
জরুরি অবস্থার সময়ে ধরপাকড় থেকে বাঁচতে কলকাতা থেকে দিল্লিতে এসে শ্রমিক সংগঠনে কাজ করার জন্য বৃন্দাকে নাম পাল্টে ‘রীতা’ রাখতে হয়েছিল। বৃন্দার স্মৃতিকথার নাম রেখেছেন ‘অ্যান এডুকেশন ফর রীতা’। বইয়ে তাঁর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫, তাঁর রাজনৈতিক সফরের প্রথম দশ বছরের কথা রয়েছে। সেখানে বৃন্দা লিখেছেন, মহিলা হিসেবে দিল্লিতে প্রথম দিকে কাজ করার সময়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। তাঁর মতামতকে কখনও প্রকাশ কারাটের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের নিরিখে দেখা হয়নি। অথচ দলে জাতীয় স্তরে দায়িত্ব বাড়ার পরে, তাঁর নিজস্ব পরিচিতি, পার্টির ‘হোলটাইমার’ হিসেবে বহু বছর ধরে কাজ করা সত্ত্বেও অনেক সময় তাঁকে শুধু প্রকাশ কারাটের স্ত্রী হিসেবে দেখা হয়েছে। বিশেষত দলের মধ্যে মতভেদের সময় তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে চর্চা বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
এই স্মৃতিকথা ১৯৮৫-তে শেষ হলেও বৃন্দা লিখেছেন, ১৯৮৫-তে দিল্লিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। কারণ ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গার সময় আরএসএস সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর কাজ করেছিল। তাতে জড়িত বিজেপি-আরএসএস নেতা রামকুমার জৈন অটলবিহারী বাজপেয়ীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। সেই সাম্প্রদায়িক শক্তিই আট বছরের মধ্যে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।