সীতারাম ইয়েচুরি। ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে একমঞ্চে গিয়ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই রাহুলের অবস্থান নিয়েই ধন্দে পড়ল বামেরা!
রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতারই প্রস্তুতি চলছিল বাম শিবিরে। বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোটকে একজোট করাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু তার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেড সমাবেশে সমর্থন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন রাহুল। এর পরে কংগ্রেসের অবস্থান কী হয়, সে দিকে নজর রেখেই সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে সিপিএম। বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্যের কংগ্রেসও।
তৃণমূল নেত্রী মমতার উদ্দেশে বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি লিখেছেন, ‘সত্যিকারের জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নকে রক্ষা করা যায় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে’। রাহুলের এই মতকে সমর্থনই করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা, হল ওই তিন প্রশ্নেই এই রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ রাজ্যে তৃণমূল পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে লোকসভা পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে ভোট লুঠ করেই চলেছে। মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার এখানে বিপন্ন।’’ তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আক্রমণ এবং হাজার হাজার মিথ্যা মামলা থেকে কংগ্রেস কর্মীরাও রেহাই পাননি।’’ তার পরেও গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় তৃণমূলের উপরে কী ভাবে ভরসা করা যায়, সেই প্রশ্নই তুলেছে সিপিএম।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও শুক্রবার অভিযোগ করছেন, ‘রথযাত্রা’র পাল্টা ‘পবিত্রযাত্রা’ বা ‘রামমন্দিরে’র পাল্টা ‘সূর্যমন্দিরে’র কথা বলে ধর্মকে রাজনীতিতে বিজেপির মতো টেনে আনছে তৃণমূলও। কিন্তু সেই তৃণমূলের বিজেপি-বিরোধী সমাবেশকেই তো ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন রাহুল! সোমেনবাবুর দাবি, ‘‘উনি কোনও স্বীকৃতি দেননি। বিজেপির বিরোধিতার কথা বলে যারা যেখানে কর্মসূচি নিচ্ছে, তাদেরই বার্তা দিচ্ছে কংগ্রেস।’’ এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটে রাজ্যে আখেরে কী কৌশল হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বাংলার কংগ্রেস ও সিপিএম দু’পক্ষকেই।
মমতার সমাবেশের দিনই উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিটে যাওয়ার কথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে আলিমুদ্দিন। ইয়েচুরি এ দিনও বলছেন, ‘‘বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে সব ভোটকে একত্রিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ আর সূর্যবাবু বলেছেন, তৃণমূলের সমাবেশে কংগ্রেস-সহ বাকি দলগুলি কী অবস্থান নেয়, সে দিকে তাঁরা নজর রাখছেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস ছা়ড়াও আসন সমঝোতা করেছিল এনসিপি, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি। তাদের সকলকেই আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু এ দিন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি-র সঙ্গে সিপিএমের পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে, মমতার মঞ্চে হাজির থাকা একই দলকে আবার দু’সপ্তাহের মধ্যে বামেদের সমাবেশে ডাকার কি অর্থ আছে?