CPIM

CPM-CBI: সিবিআই, ইডি-প্রশ্নে উভয় সঙ্কটে সিপিএম

উভয় সঙ্কট নিয়ে এ বারের এই আলোচনায় অবশ্য ছিলেন না সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

Advertisement

 সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৭:৩৪
Share:

দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক

বিজেপির প্রশ্ন, দুর্নীতি না করে থাকলে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে ভয় কী! আবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, দিল্লি, কেরল বা অন্যত্র ইডি খারাপ কিন্তু বাংলায় ভাল? পরিস্থিতির চাপে ইডি-প্রশ্নে এখন উভয় সঙ্কটে সিপিএম! বস্তুত, কম-বেশি সব বিজেপি-বিরোধী দলই এই প্রশ্নে পড়েছে বিড়ম্বনায়।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় ইডি-র হাত আরও শক্ত করেছে। আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে ইডি-কে তদন্তে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা সর্বোচ্চ আদালত তো দিয়েছেই। এমনকি, তদন্ত গুটিয়ে আনার জায়গায় যাওয়ার আগে অভিযুক্তের জামিনের পথও কঠিন হয়ে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক এই ঘটনাবলি নিয়েই দলের দু’দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিশদে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনায় এসেছে বাংলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত এবং ইডি-র মাধ্যমে বিপুল সম্পত্তি উদ্ধারের কথাও। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইডি বা সিবিআইকে ‘অতি-সক্রিয়’ করে তুলে যে বিপজ্জনক খেলা খেলছে, তা এখন জলের মতো পরিষ্কার বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। আবার এই বাতাবরণের জন্যই ইডি-র কাজ নিয়ে যেখানে প্রশ্ন নেই, সেখানেও খোলাখুলি সে কথা বলতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে! আলোচনার প্রেক্ষিতেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকরী সংস্থাগুলির ‘অতি-সক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দু’দফায় দেশ জুড়েই প্রচারে নামা হবে।

বাংলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে ইডি তৃণমূলের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার (তখনও তিনি মন্ত্রী) এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বিপুল টাকা, সোনা-দানা উদ্ধার করার পরে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, তদন্তকারী সংস্থা কোমর বেঁধে নেমেছে। আরও কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসবে। দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রিসভা’র প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুললেও তদন্ত নিয়ে বাড়তি দাবি করতে পারছে না বামেরা। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ রাজ্যের সিপিএম নেতারা বলেছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নানা ধরনের নিয়োগে ভূরি ভূরি অনিয়ম ও টাকার বিনিময়ে চাকরির অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠেছিল। ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, আইনি লড়াইয়ে ছিলেন সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে আর্থিক কেলেঙ্কারির দিক খুঁজে বার করতে ইডি এসেছে। কিন্তু বিজেপি এমন ভাব করছে, তারাই যেন দুর্নীতি মুক্তির দায়িত্ব নিয়েছে! কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘যে ভাবে টাকা এবং অন্যান্য সম্পত্তির হদিস মিলেছে, তা নিয়ে সত্যিই কিছু বলার নেই। কিন্তু ইডি বা সিবিআইয়ের কাজকর্ম নিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে, তাতে নানা দিক বাঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে!’’

Advertisement

মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনার নেতা-বিধায়কদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ‘লাগিয়ে দেওয়া’ এবং জোট সরকারে ভাঙন ধরিয়ে সরকার পাল্টে দেওয়ার ঘটনাও এ বারের বৈঠকে আলোচনায় এসেছে। বৈঠকের শেষ লগ্নে রবিবার শিব সেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতকেও আটক করেছে ইডি। কেরলে সিবিআই, ইডি, এনআইএ-র দফায় দফায় তদন্তের কথাও উঠেছে। প্রসঙ্গত, দলের আসন্ন ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য যে রাজনৈতিক খসড়া রিপোর্ট তৈরি করেছে সিপিআই, সেখানে তারাও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারে’র অভিযোগ তুলেছে। সিপিএমের পলিটবুরোর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আদালতের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে তদন্তের কথা বলা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। বাংলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা নীরব থাকতে পারব না। আবার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকার বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদও চলবে।’’

উভয় সঙ্কট নিয়ে এ বারের এই আলোচনায় অবশ্য ছিলেন না সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে থাকার জন্য তিনি দিল্লিতে বৈঠকে যোগ দিতে যাননি। পলিটবুরোর আর এক সদস্য, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বৈঠকে ছিলেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement