হায়দরাবাদ পর্যন্ত অপেক্ষা নয়। হেস্তনেস্ত চাই কলকাতাতেই!
প্রকাশ কারাট শিবিরের প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির পথেই যেতে হচ্ছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিকে। আলিমুদ্দিনে শনিবার রাত পর্যন্ত পলিটব্যুরোর জরুরি বৈঠকেও ভোটাভুটি ঠেকানোর চেষ্টা বিশেষ সাফল্য পায়নি। সব ঠিকঠাক থাকলে আজ, রবিবার বৈঠকের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা রায় দিয়ে ঠিক করবেন— পার্টি কংগ্রেসে জোড়া খসড়া প্রতিবেদনই নিয়ে যাওয়া হবে? নাকি বেছে নেওয়া হবে একটা?
বিজেপি-র আগ্রাসী রাজনীতির মোকাবিলায় দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন কী হবে, সেই প্রশ্নে দ্বিমত রয়েছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও তাঁর পূর্বসূরি কারাটের। ইয়েচুরির তৈরি একটি খসড়া দলিলের পাশাপাশিই পলিটব্যুরোর বর্ষীয়ান সদস্য এস রামচন্দ্রন পিল্লাইয়ের সহায়তায় কারাটের লেখা অন্য একটি খসড়াও এ বার কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করা হয়েছে। বৈঠকের শুরুতে ইয়েচুরির আর্জি ছিল, সহমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা হোক এখানে। বিতর্কের চূড়ান্ত ফয়সালা না হয় পার্টি কংগ্রেসে হবে। কিন্তু কেরলের নেতারা তাঁর সেই ইচ্ছায় বাদ সেধেছেন। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে একটি দলিলই পার্টি কংগ্রেসে পাঠানো সিপিএমের দস্তুর।
দলীয় সূত্রের খবর, দুই খসড়া যাবে না একটি— এই প্রশ্ন সামনে রেখে দিনভর লড়াই চলেছে বঙ্গ ও কেরল ব্রিগে়ডের! গৌতম দেবের নেতৃত্বে বাংলার নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, পার্টি কংগ্রেস যেখানে নীতি নির্ণয়ের সর্বোচ্চ মঞ্চ, তা হলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা কেন আগেই রাস্তা বন্ধ করে দেবেন? তার প্রবল বিরোধিতা করেছেন ই পি জয়রাজন, পি কে শ্রীমতি, এ বিজয়রাঘবনেরা। কেন্দ্রীয় কমিটিতে দ্বিতীয় দিনের বিতর্কের শেষে আলোচনায় বসেছিল পলিটব্যুরো। সেখানেও ইয়েচুরি, বিমান বসু, মানিক সরকারেরা চেষ্টা করেছিলেন ভোটাভুটি এড়ানোর। কিন্তু পিল্লাইয়ের নেতৃত্বে পাল্টা মতের পাল্লা ভারী ছিল! পার্টি কংগ্রেসে একই বিষয়ে দুই খসড়া যাবে না, এই দাবিতে তাঁরা অনড়!
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘চেষ্টা অনেক করা হয়েছে। কিন্তু ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে গেলে কী আর করা যাবে!’’ কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে একটি খসড়া বেছে নেওয়া হলেও পার্টি কংগ্রেসের বিতর্কে তো তা আবার খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? ওই নেতার জবাব, ‘‘তা থাকে। তবে খসড়া দলিল থেকে বোঝানো যায়, পার্টি কী চাইছে। তার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পার্টি কংগ্রেসের।’’ দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, একটি দলিল পাঠানোর পক্ষেই কেন্দ্রীয় কমিটি রায় দিলে দুই খসড়া মিলিয়ে তড়িঘড়ি অভিন্ন একটি খসড়া তৈরির জন্যও উদ্যোগ হতে পারে।
কারাটেরা চান, বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে আন্দোলনের মঞ্চ হতে পারে। কিন্তু কোনও ভাবেই তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা চলবে না। আর ইয়েচুরি শিবিরের মত, সমঝোতার দরজা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। বরং, কৌশলে দরজা খোলা রাখা উচিত। কোন পথে যাব-র চেয়েও দক্ষিণী নেতাদের দৌলতে বড় বিতর্ক হয়ে দেখা দিয়েছে কখন যাব! এই সূত্রেই এ দিন বৈঠকে গৌতমবাবু বলেছেন, দলের লাইন সংক্রান্ত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদর্শ মঞ্চ পার্টি কংগ্রেস বা প্লেনাম। পার্টি কংগ্রেসে গোটা দলের সব স্তরের প্রতিনিধিরা খোলাখুলি আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিন। কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতা চার দেওয়ালের মধ্যে এত বড় সিদ্ধান্ত এখনই কেন নিয়ে নেবেন?
আলিমুদ্দিনে এই বিতর্ক চলার ফাঁকেই পাম অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে এ দিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন কারাট। সূত্রের খবর, অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত বুদ্ধবাবু কারাটকে বলেছেন, সহমতের বাতাবরণ বজায় থাকাই ভাল। পিল্লাইয়েরা অবশ্য সে সব শোনার বান্দা নন!