বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে সিপিএমের সিদ্ধান্ত আপাতত ঝুলে রইল।
লোকসভা ও পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করতে তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল না। কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনী জোট করলে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক লাইনের খেলাপ হবে। তাই পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ পরিস্থিতির কথা ভেবে কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ চাইলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় কমিটিই ওই সমঝোতার রাস্তা খুলে দিক।
সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, সরাসরি জোট না করে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ায় আঁতাঁতে যেতে পারে কংগ্রেস-সিপিএম। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সব কিছু চূড়ান্ত করার জন্য হাতে আরও সময় রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। আমরা বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে চাই। তার জন্য যেখানে আমরা রয়েছি, সেখানে থাকছি। যেখানে থাকব না, সেখানে তাকেই ভোট দেব, যে বিজেপি-তৃণমূলের হার নিশ্চিত করবে।’’ কেন্দ্রীয় কমিটিতে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের যুক্তি ছিল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি নিজেদের মধ্যেই মেরুকরণ করে ফেলছে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হলে তবেই দু’পক্ষ মিলে গোটাদশেক আসনে লড়াই করা যাবে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে সূর্যবাবু, বিমানবাবুরা আলাদা করেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাংলা যখন কংগ্রেসের হাত ধরতে চাইছে, তখন নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাঁচ রাজ্যের ভোটের রণকৌশল ঠিক করতে গিয়ে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগঢ় ও রাজস্থানে কংগ্রেসকে নিয়েই সমস্যা দেখা দিচ্ছে! তেলঙ্গানাতেও বহুজন বামফ্রন্ট গড়েছে সিপিএম, যার মধ্যে কংগ্রেস নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগঢ়ে কংগ্রেস কোনও কথা বলতেই রাজি নয়। আসন ছাড়া তো দূরের কথা!’’ আসন মিলছে না বলেই মায়াবতী ওই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে রাজি হননি। অথচ রাজস্থান বিধানসভায় কিছু আসনে সিপিএম জিততে পারে বলে দলের নেতাদের আশা। অগত্যা সিপিএম রাজস্থানে ‘গণতান্ত্রিক মোর্চা’ তৈরির পথে যাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগঢ়েও অ-কংগ্রেসি দলের জোটেই সিপিএমের যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘২০১৯-এ আমাদের লক্ষ্য, বিজেপিকে হারানো এবং বামেদের সাংসদ-সংখ্যা বাড়ানো। সেই সঙ্গে কেন্দ্রে বিকল্প ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন।’’ তবে তার জন্য ভোটের আগে ‘মহাজোট’ বাস্তবে সম্ভব হবে না বলেই ইয়েচুরির মত। কারণ, রাজ্য ভেদে দলগুলির সমীকরণ আলাদা। সে ক্ষেত্রে বিকল্প সরকার গঠনে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে ফের হাত মেলাবে কি না, তা ভোটের পরেই ঠিক হবে বলে ইয়েচুরির যুক্তি।