সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল ছবি।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। রবিবার শেষ হয়েছে। সূত্রের খবর, সামগ্রিক ভাবে সিপিএম শীর্ষনেতৃত্ব মনে করছেন, শুধুমাত্র দলের পরিধির মধ্যে থেকে ভোটে হারের ‘করুণ’ অবস্থার পর্যালোচনা করা যাবে না। গণ্ডি ছাড়িয়ে বার হতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে যাঁরা ‘সমালোচক’ তাঁদের কথাও শুনতে হবে মন দিয়ে। সূত্রের খবর, সমাপ্তি বক্তৃতায় দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, নিচুতলা থেকে সঠিক রিপোর্ট দলের কাছে পৌঁছচ্ছে না। সংগঠন, ভোট— বিবিধ বিষয়ে বাস্তবের আসল ছবির সঙ্গে সেই রিপোর্টের বিস্তর ফারাক থাকছে। তা কাটাতেই বৃত্ত বাড়িয়ে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
সাধারণত সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে আলোচনার নির্যাস নিয়ে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে থাকে একে গোপালন ভবন। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্য রবিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, সোমবার সেই বিবৃতি প্রকাশিত হবে। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বছর এপ্রিলে নির্ধারিত সময়েই দলের পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে তার তারিখ এবং স্থান চূড়ান্ত হয়নি।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য, দলের সমালোচনা করলেই অনেকে তাঁদের বিরোধী হিসেবে দাগিয়ে দেন। সেই প্রবণতা ত্যাগ করেই পর্যালোচনা করতে হবে। না হলে সঠিক রোগ কখনওই ধরা যাবে না। বঙ্গ সিপিএমও ইতিমধ্যেই পরিধি বাড়িয়ে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কার্যত সেই মডেলেই সিদ্ধান্ত নিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। রাজ্য এবং জেলাস্তরে পৌঁছে কেন্দ্রীয় নেতাদের পর্যালোচনায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
কেরলে ক্ষমতাসীন সিপিএমের ভোটে বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে দলের তরফে। ২০২১ সালে বিধানসভায় জিতে আসার পর তিন বছরের মধ্যে ওই রাজ্যে ১০ শতাংশ ভোট কমেছে দলের। যাকে ‘বিপজ্জনক’ প্রবণতা বলেই মনে করছে সিপিএম। কেরলের নেতারা অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বলেছেন, সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতা তাঁদের রাজ্যে ভোট কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছে। যদিও অন্য রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের বড় অংশ কেরলের এ হেন বক্তব্য মেনে নেননি বলে খবর। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “এ বারের লোকসভা ভোটে দল যে চারটি আসন জিতেছে, তার মধ্যে দু’টি তামিলনাড়ু ও একটি রাজস্থান থেকে। সেই সেই রাজ্যে কংগ্রেস, ডিএমকের মতো দলের সঙ্গে বোঝাপড়া না থাকলে এই আসনগুলিও পাওয়া যেত না।” সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য, সত্যিকারের পর্যালোচনা উঠে আসুক নিচুতলা থেকে। তাতে যেন মাঝের অংশের নেতৃত্ব বাধা না হয়ে দাঁড়ান।