সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনআরসি) রুখতে এ বার সরাসরি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিল সিপিএম। এনপিআর আটকাতে তাদের নতুন স্লোগান— ‘জবাব নেহি দেঙ্গে’!
সমীক্ষকেরা এনপিআর-এর জন্য প্রশ্নমালা নিয়ে এলে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য এর আগে আহ্বান জানিয়েছিলেন অরুন্ধতী রায়ের মতো কিছু বিশিষ্ট জন ও নাগরিক আন্দোলনের কর্মীরা। কিন্তু কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি আলোচনা করে ঠিক করল, এনপিআর-এর প্রশ্নের জবাব না দেওয়ার জন্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে আবেদন জানাবেন দলের কর্মীরা। দেশ জুড়ে আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। এনআরসি রুখতে স্লোগান উঠে গিয়েছে ‘হম কাগজ নেহে দিখায়েঙ্গে’। এনপিআর মোকাবিলায় এ বার সিপিএম বেছে নিল নতুন স্লোগান।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে রবিবার তিরুঅনন্তপুরমের ইএমএস সেন্টার থেকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ভুল তথ্য দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। নাগরিকদের জেনে-বুঝে সেই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। তার চেয়ে আমরা বলব, জবাব নেহি দেঙ্গে! সাধারণ জনগণনা এবং এনপিআর-এর মধ্যে কী তফাত, আমাদের কর্মীরা তা বোঝাতে বাড়ি বাড়ি যাবেন।’’ ইয়েচুরিদের বক্তব্য, সরকারি সমীক্ষকেরা জনগণনা এবং এনপিআর-এর জন্য দুই গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে যাবেন। সেগুলোর মধ্যে কী ফারাক এবং জনগণনায় আপত্তি না করেও এনপিআর-এ অসহযোগিতার কথা সিপিএম কর্মীরা ব্যাখ্যা করতে নামবেন।
এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বুঝিয়ে দিয়েছে, আগের মতো আর কাগজ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে দেখিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে যাবেন না সমীক্ষকেরা। তার বদলে এখন ব্যবহার হবে স্মার্টফোন। এই কারণেই ‘জবাব নেহি দেঙ্গে’র কথা বলছে সিপিএম। তাদের মতে, এই ক্ষেত্রে ‘কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’র ডাক গরিব, সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক না-ই হতে পারে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন বলেছে এনপিআর-এর জন্যে কোনও কাগজ দেখাতে হবে না।
ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘জনগণনার সঙ্গে এনপিআর-কে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। অতীতে যখন এনপিআর হয়েছে, তখন সমস্যা ছিল না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি এবং সরকারি বিজ্ঞপ্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, এনপিআর নাগরিকত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এনআরসি-র প্রথম ধাপ। ব্রিটিশ শাসকের হাতে ভগৎ সিংহ, রাজগুরু ও সুখদেবের শহিদ হওয়ার দিন, ২৩ মার্চ পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা মানুষকে এই বাস্তব বোঝানোর চেষ্টা করবেন।’’ কেরল, বাংলা, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রপ্রদেশের বাইরে যেখানে সিপিএমের বলার মতো সংগঠনই নেই, সেখানে বাড়ি বাড়ি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থাকছেই।
কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মতোই কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার মনে করছে, এনপিআর বা জনগণনা নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের বৈঠক বয়কট করে লাভ নেই। বৈঠকে গিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জেনে নেওয়া এবং নিজেদের অবস্থান বুঝিয়ে আসা বরং ভাল। বিজয়নদের এই মনোভাব মেনে নিয়েছেন ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটেরা।