‘জেলার’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেতা রজনীকান্ত। —সংগৃহীত।
‘থালাইভা’ রজনীকান্তের শেষ ছবি ‘জেলার’ ঝড় তুলেছে বক্স অফিসে। খানিকটা তার কাছাকাছি সময়েই বিহারের রাজনীতির বক্স অফিস মাতিয়ে দিলেন অন্য এক রজনীকান্ত। যাঁকে ‘জেলার’ বললেও খুব অত্যুক্তি হবে না। আক্ষরিক অর্থে ‘জেলার’ অবশ্য কোনও সংশোধনাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ কর্তা। এই রজনীকান্ত অবশ্য কর্তা নন, অভিযুক্ত। কিন্তু প্রভাবে তিনি প্রায় ‘জেলার’ই বটে! কারণ, ১১ মাস জেলবন্দি থাকার সময়েই তিনি একটি নির্বাচনে জিতেছেন ১৭ হাজার ভোটে!
পাশাপাশিই ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়েছেন সিপিআইয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে।
সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের সর্বভারতীয় সম্মেলনের সব আলো কেড়ে নিয়েছেন রজনীকান্ত যাদব। যিনি একইসঙ্গে এখন সংগঠনের বিহার রাজ্য কমিটির সভাপতি। রাজনৈতিক মামলায় ১১ মাস জেলে থাকার সময়েই রজনীকান্ত জেলা পরিষদের নির্বাচনে জিতেছিলেন প্রায় ১৭ হাজার ভোটে।
শনিবার থেকে বিহারের বেগুসরাইয়ে শুরু হয়েছে এআইএসএফের ৩০তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। কানহাইয়া ছিলেন এই সংগঠনেরই নেতা। ঘটনাচক্রে, তিনি বেগুসরাইয়েরই ভূমিপুত্র। কিন্তু সিপিআই সূত্রে খবর, সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রতিবেদন হোক বা প্রতিনিধিদের আলোচনা— কোথাওই উল্লেখ করা হয়নি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী কানহাইয়ার নাম। কানহাইয়া বিহারের ছেলে হলেও তাঁর রাজনৈতিক উত্থান দিল্লিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন। একটা সময়ে তাঁর বক্তৃতা আন্দোলিত করত বামমনস্ক তরুণদের। তবে অনেকে এ-ও বলতেন যে, ভাল বক্তা মানেই সবসময়ে ভাল সংগঠক হন না। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, কানহাইয়ার নাম উচ্চারণ না করে আসলে তাঁকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করতে চাইল সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন। সেই সঙ্গে রজনীকান্তের লড়াইকে সামনে এনে বোঝাতে চাইল, ‘বিকল্প’ তৈরি। কেউ অপরিহার্য নন। রবিবার শেষ হবে সম্মেলন। দক্ষিণ এবং উত্তর ভারতের রাজ্য থেকে নতুন সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত করা হতে পারে বলে খবর।
সম্মেলনে বলছেন বাম ছাত্রনেতা রজনীকান্ত যাদব। —ছবি সংগৃহীত।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বেগুসরাই আসন থেকেই সিপিআইয়ের টিকিটে লড়েছিলেন কানহাইয়া। কিন্তু বিজেপির গিরিরাজ সিংহের কাছে বিপুল ভোটে পরাস্ত হতে হয় তাঁকে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্ক্সবাদী কানহাইয়া যোগ দেন কংগ্রেসে। তার আগেই সিপিআই এই তরুণ নেতাকে জাতীয় পরিষদের সদস্য করেছিল। বিহারের সংগঠন দেখার ভারও দিয়েছিল। বেগুসরাইয়ে সিপিআই ‘ঐতিহ্যগত’ ভাবে শক্তিশালী। যে কারণে বেগুসরাইকে ‘বিহারের লেনিনগ্রাদ’ বলেন দলের নেতারা। কানহাইয়া দল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অনেকের আশঙ্কা ছিল, ছাত্র-যুবদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারেন তিনি। কিন্তু ফলিত স্তরে তা তো হয়ইনি। উল্টে কানহাইয়া কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর রজনীকান্ত জেল থেকে জেলা পরিষদ ভোটে জিতেছেন।
কানহাইয়ার দলত্যাগের তিন মাসের মধ্যেই বিহারে জেলা পরিষদের ভোট হয়েছিল। বেগুসরাই শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে খাগাড়িয়া আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তরুণ রজনীকান্ত। তখন তিনি জেলবন্দি। জেলে থেকেই ভোটে লড়েন। জেতেন। শনিবার রজনীকান্তকে সংবর্ধিতও করা হয়েছে সম্মেলন মঞ্চে।