গণপিটুনি সেই যুবককে। ফাইল চিত্র।
সুসজ্জিত সম্মেলনস্থল থেকে খুব দূরে ছিল না ত্রিশূর মেডিক্যাল কলেজের লাশকাটা ঘর। সেখানে যখন ময়না তদন্ত হচ্ছে গণপিটুনিতে নিহত আদিবাসী যুবক মধুর মরদেহের, সেই সময়েই নিজেদের জনভিত্তি নিয়ে কাটাছেঁড়া চালাল কেরল সিপিএম। মধুর মৃত্যু ঘিরে গোটা দেশের নাগরিক সমাজে যখন আলোড়ন, সিপিএম তখন নিজেরাই প্রশ্ন তুলল— গরিব মানুষের উপরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব কি ক্ষয়িষ্ণু?
ত্রিশূরে সিপিএমের ২২তম কেরল রাজ্য সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবার। সম্মেলনে পেশ হওয়া সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গরিব মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বরাবরই থেকেছেন আমাদের সঙ্গে। তা হলে এখন কেন উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে? রুটি-রুজির লড়াইয়ে গরিব মানুষের যে লাল পতাকার নীচে সমবেত হওয়ার কথা, তাঁদের একাংশ কেন পা বাড়াচ্ছেন অন্য দিকে? গভীর ভাবে এর উত্তর সন্ধান করতে হবে’। বাকি ভারতের মতো দক্ষিণী এই রাজ্যেও এখন উত্থান ঘটেছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের। আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্যই তাঁদের একাংশের উপরে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ছে, এমন কথাই উঠে এসেছে সম্মেলনে।
ঘটনাচক্রে, সিপিএমের এই সম্মেলন চলাকালীনই গণপ্রহারে মধুর মৃত্যুর ঘটনা কেরলের আর্থ-সামাজিক ছবিকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। সাক্ষরতা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ন্যায়ের মতো সচকের নিরিখে কেরল কত এগিয়ে, তা নিয়ে প্রায়শই গর্ব করেন সে রাজ্যের বাম নেতারা। কিন্তু ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ পালাক্কাডের জঙ্গলের কিনারায় দোকান থেকে খাবার চুরি করার ‘অভিযোগে’ দলিত যুবক মধুকে পিটিয়ে মারার ঘটনা তাঁদের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক বলেই ফেলেছেন, ‘‘আমাদের তো লড়াই ছিল খিদের সঙ্গে। অনাহারে থাকা একটা মানুষকে যাঁরা পিটিয়ে মারেন এবং যাঁরা নিজস্বী তুলে সেই মুহূর্তের উদযাপন করেন, তাঁরা সমাজের জন্য বিপদসঙ্কেত! সামাজিক ন্যায়, স্বাধীনতা, সাক্ষরতা— এ সব নিয়ে বড়াই আমাদের বন্ধ রাখা উচিত!’’
গরিবের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার চিন্তার পাশাপাশিই সিপিএমের রিপোর্টে কড়া সমালোচনা হয়েছে আন্দোলনের চেয়ে লোকসভা বা বিধানসভায় জায়গা পাওয়ার জন্য দলে হুড়োহুড়ির প্রবণতার। ছেলেকে নিয়ে বিতর্কের মাঝেও রবিবার ফের কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। কলকাতার কেন্দ্রীয় কমিটিতে আইসিইউ থেকে ভোট দিতে আসা পি কে গুরুদাসন-সহ ৯ জন বাদ গিয়েছেন রাজ্য কমিটি থেকে।