লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ফাইল চিত্র।
বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে নীতীশ কুমার বেরিয়ে আসার পরে নতুন সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে বামপন্থীরা। বিকল্প সরকারের অন্যতম সহযোগী দল হিসেবেই সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এ বার জানালেন, তাঁরা চান অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে এই সরকার চলুক। কৃষকদের সমস্যা বা কর্মসংস্থানের প্রশ্নের সুরাহা হোক। দীপঙ্করের দাবি, ‘‘বিহারের এই পালাবদল শুধু ওই রাজ্যেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। বিজেপি দেশে যে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে, তাতে বড় আঘাত হেনেছে বিহার। বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে গিয়েছে!’’
লিবারেশনের এখন ১২ জন বিধায়ক রয়েছেন বিহারে। সিপিএম ও সিপিআইয়ের রয়েছে দু’জন করে বিধায়ক। আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগটবন্ধনে’ বামেরাও ছিল। নীতীশ-তেজস্বীদের এখনকার সরকারকেও বামেরা সমর্থন করছে। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার কলকাতায় নীতীশের নতুন সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের পক্ষে সরব হয়েছে সিপিএম এবং লিবারেশন। বিহারে যা হয়েছে, তা হওয়ারই ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। আলিমুদ্দিনে এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইয়ে তো হোনা হি থা! নীতীশ পুরনো জনতা পরিবারের লোক। এনডিএ-র সঙ্গে গেলেও টিডিপি, বিজেডি, শিবসেনা, অকালি দল অনেকেই এর মধ্যে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে। বিজেপি মহারাষ্ট্র মডেলে বিধায়ক কিনে বা দল বদল করিয়ে বিহারে সরকার করতে চাইছিল। অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে নীতীশ সেই ছক ধরে ফেলেছেন।’’ নীতীশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নে সেলিমের জবাব, ‘‘বিজেপির দিকে গেলে বলা হত মাস্টার স্ট্রোক! এখন বিজেপির দানা চিবোননি বলে বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বলা হচ্ছে।’’
নীতীশের বারবার শিবির বদল নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে দীপঙ্করেরও দাবি, উত্তরপ্রদেশে ফের বড় সাফল্য পাওয়ার পর থেকেই বিজেপি বিহারে সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছিল। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিজেপিকে রুখতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। দীপঙ্করের কথায়, ‘‘আশা করব, এখন নীতীশের যে উপলব্ধি হয়েছে, তা তিনি মনে রাখবেন। নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তিনিই প্রমাণ করবেন!’’ তার পাশাপাশিই তঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা চাইব অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করা হোক। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিহারেও কর্মসংস্থান একটা বড় বিষয়, কিসান মান্ডিগুলো বেহাল। এই সমস্ত বিষয়েই নজর দিতে হবে।’’ ন্যূনতম কর্মসূচি ঠিক মতো রূপায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নজরদারি কমিটি গড়ার দাবিও রয়েছে তাঁদের। পটনায় আগামী ১৩ অগস্ট লিবারেশনের বিহার রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই বিষয়গুলি আলোচনায় আসবে বলে দীপঙ্কর জানিয়েছেন।
তবে বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ার পথে মাঝেমাঝেই যে বাধা পড়ছে, সেই সমস্যা মেনে নিয়েছেন লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক। এই সূত্রে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর মতে, কে কার সঙ্গে প্রথম কথা বলল বা ফোন করল, এই সব হিসেব করে বিরোধী ঐক্য চলে না। গণ-আন্দোলনের প্রতি তৃণমূল সরকারের মনোভাব ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন দীপঙ্কর।