আমেরিকা-সহ বিশ্বের অন্তত ২৯টি দেশে এই মুহূর্তে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ক্র্যাকেন। প্রতীকী ছবি।
ভারতেও দেখা মিলতে শুরু করেছে ওমিক্রনের উপপ্রজাতি এক্সবিবি.১.৫ বা ক্র্যাকেন ভেরিয়েন্ট-এর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, সংক্রমণের প্রশ্নে ক্র্যাকেন সবথেকে শক্তিশালী উপপ্রজাতি হওয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বার না হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকা-সহ বিশ্বের অন্তত ২৯টি দেশে এই মুহূর্তে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ক্র্যাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, সংক্রমণের প্রশ্নে এর আগের বিকিউ১ থেকে ক্র্যাকেন ১২০ গুণ বেশি সক্রিয়। ভারতেও এই মুহূর্তে মূলত সাত জনের দেহে ক্র্যাকেনের নমুনা পাওয়া গিয়েছে—ছত্তীসগঢ়, গুজরাত, তেলঙ্গানা, রাজস্থান ও কর্নাটকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সাত জনই বিদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে থাকাকালীন কত জনকে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন ওই ব্যক্তিরা। যদিও দেশীয় জনগোষ্ঠীর জিনোম সিকোয়েন্স করে জানা যাচ্ছে যে, দেশে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এক্সবিবি উপপ্রজাতির মাধ্যমে। আর এক্সবিবি.১.৫ বা ক্র্যাকেন-এর বিশেষত্ব হল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিয়ে সংক্রমণ ঘটানো।
জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের কো-চেয়ারম্যান রাজীব জয়দেবনের কথায়, ‘‘এই উপপ্রজাতিটির বিরল ধরনের চরিত্র পরিবর্তন (মিউটেশন) হয়েছে এবং সে কারণে এটি করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে (প্রতিষেধক বা সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া) ফাঁকি দিতে সক্ষম।’’ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তাই যাঁরা সদ্য করোনা থেকে সেরে উঠেছেন কিংবা সদ্য করোনার টিকা নিয়েছেন, তাঁরাও ক্র্যাকেন-এ আক্রান্তহতে পারেন এবং ক্র্যাকেন এক বার ছড়িয়ে পড়লে রোখা কঠিন। সে কারণে বয়স্ক ও শিশুদের আগামী এক-দেড় মাস বাড়িতে থাকার উপরে জোর দিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক এম ওয়ালির মতে, ‘‘এই আবহে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি অসুরক্ষিত। তাই সতর্কতা বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়।’’ তবে আশার বিষয়, ক্র্যাকেনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়া কিংবা মৃত্যুর ঘটনা তুলনায় অনেক কম।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রনের বিএ২.৭৫ এবং বিএ.২.১০.১ প্রজাতি মিলে তৈরি হয়েছে এক্সবিবি.১.৫ বা ক্র্যাকেন উপপ্রজাতিটি। ‘হু’ ক্র্যাকেনকে সংক্রমণের প্রশ্নে সবথেকে শক্তিশালী উপপ্রজাতি বলে চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও পর্যন্ত যা গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, শরীরে করোনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলেও, সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম এক্সবিবি ও এক্সবিবি.১.৫। চরিত্র পরিবর্তনের ফলে এক্সবিবি.১.৫ মানবকোষকে আঁকড়ে ধরে, শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। সম্প্রতি ‘সেল’ পত্রিকায় বলা হয়েছে, এক্সবিবি.১.৫-এর মতো উপপ্রজাতিগুলি করোনা প্রতিষেধকের কার্যকারিতাকে কার্যত ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম। এটির মারণক্ষমতা কম। তবে যাঁরা বিভিন্ন ধরনের ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, তাঁরা আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।