ছবি রয়টার্স।
এ দেশে চলতি মাসেই বা নতুন বছরের গোড়ায় জরুরি পরিস্থিতিতে করোনা প্রতিষেধক প্রয়োগের অনুমতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন এমসের ডিরেক্টর তথা কেন্দ্রের কোভিড ম্যানেজমেন্ট দলের অন্যতম সদস্য রণদীপ গুলেরিয়া। তাঁর কথায়, ভারতের দু-তিনটি প্রতিষেধক এই মুহূর্তে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে, এ মাসে বা আগামী মাসের গোড়ায় সেগুলি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
ব্রিটেন কালই টিকাকরণে ছাড়পত্র দিয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে টিকাকরণ শুরু হতে চলেছে সেখানে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে কবে থেকে টিকাকরণ শুরু হবে? বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে দেশের একাধিক টিকা গবেষণাকেন্দ্র ঘুরে আসার পরে ওই জল্পনা আরও তীব্র হয়। এই পরিস্থিতিতে আজ মুখ খুলে গুলেরিয়া জানান, “ভারতে বেশ কিছু প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষেধক ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।’’ তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্বিক টিকাকরণ শুরু হতে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলেই মত তাঁর।
কোন প্রতিষেধক বাজারে আগে আসবে তা নিয়ে মুখ খোলেননি গুলেরিয়া। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতে প্রতিষেধকের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে কোভিশিল্ড। যা বানিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থা। ভারতে ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, উৎপাদন ও বাজার ছাড়ার দায়িত্বে রয়েছে সিরাম সংস্থা। কার্যত গুলেরিয়া যে সময়সীমার কথা বলেছেন, সেই সময়সীমা মেনেই এগোচ্ছে সিরামও। আদার পুনাওয়ালার সংস্থা দাবি করেছে, এ বছরের শেষেই তারা কোভিশিল্ডের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য আবেদন জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে ওই প্রতিষেধক বাজারে ছাড়তে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছে তারাও। তবে চলতি সপ্তাহে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নেওয়া এক স্বেচ্ছাসেবক দাবি করেন, ওই টিকা নেওয়ার পর থেকেই তাঁর একাধিক অসুস্থতা দেখা গিয়েছে। আজ গুলেরিয়া বলেন, চেন্নাইয়ের ওই ঘটনাকে প্রতিষেধক দেওয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। যখন বড় সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। কারও শরীরে যদি আগে থেকেই রোগ থাকে, তা হলে এমন হতে পারে। প্রায় ৭০-৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। কারও শরীরে বড় মাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে শোনা যায়নি। তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার প্রশ্নেও ওই প্রতিষেধক যথেষ্ট নিরাপদ।
কিন্তু টিকা বাজারে আসার দিন যত এগিয়ে আসছে, তত এ নিয়ে রাজনীতির পারদও চড়তে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের সব মানুষ টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, ন্যূনতম যত জনকে দিলে করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব হবে তাদেরই টিকা দেবে সরকার। কেন ওই অবস্থান পরিবর্তন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ সরব হয়েছেন রাহুল গাঁধী-সীতারাম ইয়েচুরিরা।
রাহুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন সকলকে টিকা দেওয়া হবে। বিজেপি বিহারে প্রচারে বলেছে, রাজ্যের সমস্ত মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। আর কেন্দ্র বলছে, সকলকে টিকা দেওয়া হবে এ কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানটি ঠিক কোথায় তা হলে?” বেছে বেছে টিকা দেওয়ার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইয়েচুরির টুইট, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে যে সরকারই এসেছে তারা সর্বজনীন টিকাকরণ নীতি মেনেই চলেছে। এ ক্ষেত্রেও সেই নীতি কড়া ভাবে মেনে চলা উচিত। মোদী সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিলে যে হাজার হাজার কোটি টাকা হিসাব ছাড়া পড়ে রয়েছে, টিকাকরণে সেই টাকা খরচ করা হোক।”