ছবি: পিটিআই।
করোনা-যুদ্ধে থালা বাজানো, দীপ জ্বালানোর মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল আগেই। এ বার গণটিকাকরণ কর্মসূচিও শুরু করা হচ্ছে ধর্মীয় তিথিনক্ষত্র মিলিয়েই।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যেমনটি বলেছিলেন, সেই পথে হেঁটেই মকর সংক্রান্তি পার করে টিকাকরণ শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে গোটা দেশ জুড়ে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
প্রথম পর্বে চিকিৎসক ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার (পুর কর্মী, পুলিশ, সেনা-আধাসেনা) মিলিয়ে তিন কোটি দেশবাসীকে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেবে কেন্দ্র। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা হবে আরও ২৭ কোটি দেশবাসীকে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্যাবিনেট সচিব, স্বাস্থ্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পরে আগামী শনিবার থেকে ওই অভিযান শুরুর ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেন।
আগামী ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। বাংলায় পৌষ সংক্রান্তি, গুজরাতে উত্তরায়ণ, অসমে বিহু, কর্নাটকে মকর সংক্রমণ, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, কেরলে মঘরা ভালাকু— এমন নানা নামে ওই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। বিজেপি নেতাদের মতে, মকর সংক্রান্তির আগে কোনও শুভ কাজ করা উচিত নয়। সংক্রান্তির দিনে সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন হয় এবং অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয়
বলে বিশ্বাস রয়েছে। তাই সংক্রান্তির পরেই টিকা দেওয়ার শুভ কাজ শুরু হবে বলে গত সপ্তাহেই দাবি করেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। আজ মোদী সরকারও জানিয়েছে, আসন্ন লোহরি,
মকর সংক্রান্তি, পোঙ্গল, মাঘ বিহু উৎসবের কথা মাথায় রেখে ১৬ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ দেশ জুড়ে শুরু করা হবে।
সরকারের ওই ঘোষণা আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেন, ‘‘কোভিডের সঙ্গে লড়ার প্রশ্নে আগামী ১৬ জানুয়ারি ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করতে চলেছে। ওই দিন থেকে দেশ জুড়ে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হবে। অগ্রাধিকার পাবেন আমাদের সাহসী চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা, যার মধ্যে রয়েছেন সাফাই কর্মীরাও।’’
সোমবার করোনা পরিস্থিতি ও প্রতিষেধক দেওয়া নিয়ে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগে সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিষেধক দেওয়ার দিন ক্ষণ ঘোষণা করতে পারেন মোদী। কিন্তু আজ সরকারের পক্ষ থেকে দিন ঘোষণা করে দেওয়ার পরে সেই নিয়ে আলোচনার আর কোনও জায়গা থাকল না। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও রাজ্যের পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলে সেটা সোমবারের বৈঠকে জানানোর সুযোগ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীদের।
আজ সকালে প্রবাসী ভারতীয় দিবসেও কোভিড প্রতিষেধকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে নিজের সরকারকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। অতিমারি আক্রান্ত বিশ্বে এর আগে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কূটনৈতিক সংযোগ ঘটাতে দেখা গিয়েছে মোদী সরকারকে। ভারতের প্রতিষেধককেও যে তিনি এ বার সে কাজে ব্যবহার করবেন সেই ইঙ্গিতও দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। আজ ষোড়শ প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনে অনলাইন বক্তৃতায় মোদী বলেছেন, ‘গোটা বিশ্ব শুধুমাত্র ভারতীয় প্রতিষেধকের জন্য অপেক্ষা করেছে তাই-ই নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিকাকরণ প্রক্রিয়ার দিকেও উন্মুখ হয়ে চেয়ে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ জানিয়েছেন, দেশজ দু’টি প্রতিষেধকের মাধ্যমে মানুষকে বাঁচানোর জন্য প্রস্তুত ভারত। তাঁর কথায়, “ভারত এক সময় বাইরে থেকে পিপিই সরঞ্জাম, মাস্ক, ভেন্টিলেটর এবং টেস্ট কিট আমদানি করেছে। কিন্তু আজ আমাদের এ ব্যাপারে কারও উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। দু’টি মেড ইন ইন্ডিয়া করোনা প্রতিষেধকের সাহায্যে আমরা মানবজাতিকে বাঁচাতে প্রস্তুত।’’