করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে দিল্লির একটি হাসপাতালে। -ফাইল ছবি।
সেরে ওঠার পর কোনও কোভিড রোগীর দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, সেই রোগীর দেহে কিছু কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে। তারাই সেরে ওঠা কোভিড রোগীকে ফের সংক্রমিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।
‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)’ –এর অধিকর্তা রণদীপ গুলারিয়া।
কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার যে বিশেষ টাস্ক ফোর্স বানিয়েছে, তার অন্যতম সদস্য রণদীপ বলেছেন, ‘‘সেরে ওঠার পর কোভিড রোগীর পরে ফের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। দেখা গিয়েছে, প্রথম বার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সেরে ওঠার সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবডি গড়ে ওঠে রোগীর রক্তে। সেই অ্যান্টিবডিগুলিই সেই রোগীর দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে, সেই রোগী দ্বিতীয় বার সংক্রমণ রুখতে পারে।’’
তিনি এও জানিয়েছেন, সেরে ওঠা কোভিড রোগী যদি পরে কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন, তা হলেও তার মধ্যে রোগের উপসর্গ খুব সামান্য পরিমাণেই দেখা যাবে।
তবে দেহের এই প্রতিরোধ ক্ষমতার মেয়াদ কতটা সে সম্পর্কে যে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি সে কথাও স্বীকার করেছেন এমস-এর অধিকর্তা।
আরও পড়ুন- বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেল ১ কোটি
আরও পড়ুন- গুরুতর রোগীকে গ্লুকোকর্টিকয়েডস
রণদীপের কথায়, ‘‘অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি হওয়ার ফলে দেহের বেড়ে ওঠা প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিন পর্যন্ত এই ভাইরাসের দ্বিতীয় বার হানাদারিকে রুখতে পারবে সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেটা এক সপ্তাহ বা কয়েক মাস বা তার বেশিও হতে পারে। তবে সেই সময়টুকু পর্যন্ত দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’’
এমস-এর অধিকর্তা এও জানিয়েছেন, সারা দেশে এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণ সার্বিক ভাবে শুরু হয়নি। বরং দেখা গিয়েছে, ভারতে কোভিড রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই দেশের ৮/১০টি হটস্পট শহরেরই বাসিন্দা বা সেই শহরগুলিতে কর্মসূত্রে থাকেন। ‘‘তাই এমনটা বলা যাবে না বাকি দেশেও গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই ৮/১০টি হটস্পট শহরে হয়তো স্থানীয় স্তরে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। হয়তো তার জন্যই দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো কয়েকটি শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেটা রোখার জন্য আমাদের কোমর বেঁধে নামতে হবে’’, বলেছেন রণদীপ।
জুলাইয়ে দেশে সংক্রমণ আরও বাড়বে কি না এই প্রশ্নের জবাবে রণদীপ জানিয়েছেন, সেটা নিশ্চিত নয়। পুণেতে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই কমেছে। তবে দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো কয়েকটি হটস্পটে তা বাড়তে পারে।
বর্ষায় এই সংক্রমণ কমতে পারে বলে যা রটেছে, তারও কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন এমস-এর অধিকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘গরমেও কমবে বলে রটেছিল। বরং বর্ষায় চিকিৎসকদের চিন্তাটা আরও বাড়বে। কারণ, করোনার পাশাপাশি এই সময় তাঁদের ডেঙ্গি ও চিকনগুনিয়ার মতো সংক্রামক রোগগুলির বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে। করোনার কিছু প্রাথমিক উপসর্গের সঙ্গে এই রোগদু’টিরও উপসর্গের মিল আছে বলে।’’
রণদীপ এও জানিয়েছেন, কোভিডের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি কোনও ‘ম্যাজিক বুলেট’ নয়। তারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা চিকিৎসার একটা দিক। সবটা নয়। আবার রেমডেসিভির, ফ্যাবিপিরাভির ও আইভারমেকটিনের মতো ওষুধগুলি যে সব সময় সব কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে সমান ফল দিয়েছে তা-ও নয়।