ছবি পিটিআই।
কোভ্যাক্সিন টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ছয় থেকে বারো মাস সক্রিয় থাকতে পারে বলে একটি রিপোর্টে জানাল ওই টিকার নির্মাতা সংস্থা ভারত বায়োটেক। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময়ে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে টিকার কোনও গুরুতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেও জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে।
করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে তাদের টিকা ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের কাছে ছাড়পত্রের আবেদন করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট, ফাইজ়ার এবং ভারত বায়োটেক। তিন সংস্থার কাছে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল আরও তথ্য চেয়ে পাঠানোর পরে এখনও পর্যন্ত সিরামই তা (ব্রিটেন ও ব্রাজিলে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার তথ্য) জমা দিয়েছিল। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি টিকা হিসেবে দৌড়ে রয়েছে ভারত বায়োটেক ও আইসিএমআরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কোভ্যাক্সিন। তার গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্টটিই প্রকাশ করেছে বায়োটেক, যাতে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তারা দেখাতে চেয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে এই টিকার সক্রিয়তা আশাব্যঞ্জক। এই মুহূর্তে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে কোভ্যাক্সিনের। ওই পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলে টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে বায়োটেক জানিয়েছে।
বায়োটেকের বক্তব্য, প্রথম পর্যায়ে যে স্বেচ্ছাসেবকদের কোভ্যাক্সিন বা ‘বিবিভি১৫২’ টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের শরীরে তিন মাস পরে অ্যান্টিবডির পাশাপাশি টি-সেলের সক্রিয়তাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। শরীরের এই রহস্যময় শ্বেতকণিকা বা টি-সেল পুরনো ‘শত্রুকে’ মনে রেখে তার মোকাবিলা করতে পারে। প্রথম পর্যায়ে সচরাচর টিকার সুরক্ষার দিকটিই দেখা হয়। কার্যকারিতার আসল পরীক্ষা শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায় থেকে। তবে অনেক সময়েই দু’টি পর্যায়ের পরীক্ষা একসঙ্গে হয়। বায়োটেকের বক্তব্য, টিকার সুরক্ষা প্রমাণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কোষের বাইরে (অ্যান্টিবডি মারফত) ও ভিতরে (টি-সেল মারফত) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও জোরদার হয়েছে বলেও দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায়।
বায়োটেক দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাটি করেছে ন’টি রাজ্যের ন’টি হাসপাতালে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দ্বিতীয় পর্যায়ে শিশুদের উপরেও টিকা পরীক্ষা হয়েছে। এত দিন দেখা গিয়েছে, শিশুদের উপরে করোনার প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে কম। টিকাকরণের প্রথম পর্যায়ে ভারত সরকারও শিশুদের টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে না। তবে বায়োটেক জানিয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দা ৩৮০ জন সুস্থ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ককে ‘ডাবল ব্লাইন্ড’ (এক দলকে টিকা, আর এক দলকে টিকা বাদে স্যালাইন জাতীয় অন্য কিছু দেওয়া) পদ্ধতিতে চার সপ্তাহের ব্যবধানে টিকার দু’টি ডোজ় দেওয়া হয়েছে। দেখা গিয়েছে, বয়স যা-ই হোক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও তারতম্য হচ্ছে না।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, টিকা দেওয়ার ৫৬ দিন পর্যন্ত কোনও স্বেচ্ছাসেবকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার খবর মেলেনি। পরে এই ধরনের ২১টি ঘটনার কথা জানা যায়, যার মধ্যে ছ’টি ক্ষেত্রে সরাসরি টিকার সঙ্গে যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রাণসংশয়ের মতো কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।