প্রতীকী ছবি।
মহাভারতে ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন। জৈন ধর্মের রীতি মেনে রাজ্যপাট ছেড়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
মৃত্যু আটকাতে পারে এমন কোনও কিছুর হদিশ এখনও মেলেনি। তবে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আবেদন প্রায়শই আটকে যাচ্ছে আইনের ঘেরাটোপে।
নিষ্কৃতি মৃত্যুকে মৌলিক অধিকার দেওয়ার আবেদন নিয়ে অনেক যুক্তি-তর্ক হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যুকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত তা নিয়ে আলাপ আলোচনারও অন্ত নেই। তারই মাঝে নিষ্কৃতি মৃত্যুর আবেদন নিয়ে মুম্বইয়ের এক বৃদ্ধ দম্পতির চিঠি নাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনকে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি দিয়ে দম্পতি লিখেছেন, ‘‘সমাজে আমাদের এখন আর কোনও জায়গা নেই, সমাজকে কিছু দেওয়ারও নেই।’’
৮৬ বছরের নারায়ণ লাভাতে মহারাষ্ট্রের রাজ্য পরিবহন দফতরের প্রাক্তন কর্মী। ১৯৮৯ সালে অবসর নেন। তাঁর স্ত্রী ৭৯ বছরের ইরাবতী লাভাতে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। নিঃসন্তান ওই দম্পতি বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও সন্তান নিইনি। আমাদের কোনও দুরারোগ্য ব্যাধিও নেই। জীবন স্বচ্ছল। কোনও কিছুরই অভাব নেই। কিন্তু, আমাদের বাঁচার ইচ্ছা শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
দ্বাদশের পরীক্ষায় ৮৮ শতাংশ নম্বর আফজল গুরুর পুত্র গালিবের
প্রথম মহিলা: সুপ্রিম কোর্টে সরাসরি বিচারপতি হতে যাচ্ছেন আইনজীবী ইন্দু
সরাসরি প্রাণঘাতী ওষুধ দিয়ে মৃত্যু ঘটানো বা প্রত্যক্ষ নিষ্কৃতি এবং কৃত্রিম শ্বাসগ্রহণ ব্যবস্থা সরিয়ে দিয়ে পরোক্ষ নিষ্কৃতি— কোনটা বৈধ সেই নিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্ট অবধি পৌঁছেছিল। তার পিছনে ছিল ২০১১ সালে মুম্বইয়ের অরুণা শানবাগ সংক্রান্ত একটি মামলা। জীবন্মৃত অরুণার জন্য নিষ্কৃতি-মত্যুর আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরই এক বন্ধু। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। ২০১৫ সালে মৃত্যু হয় অরুণার। এর পর আত্মহননকে বৈধতা দেওয়া উচিত কি না সেই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষ পরোক্ষ নিষ্কৃতি মৃত্যুতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে শর্ত ছিল মেডিকাল বোর্ড এবং রাজ্য সরকার ছাড়পত্র দিলে হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে তবেই তা কার্যকর হবে।
লাভাতে দম্পতির আবেদন বৈধ কি না সেই নিয়ে হয়তো বিস্তর যুক্তি-তর্ক হবে। তবে স্বচ্ছল পরিবারের এবং শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ দু’জন মানুষ কেন আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার কথা ভাবছেন। এর পিছনে কি কাজ করছে কোনও মানসিক অবসাদ? উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সমাজ।