প্রতীকী ছবি।
হরিয়ানার এক তরুণ হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করার আগে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এখন তরুণ দম্পতির আশঙ্কা, তাঁদের প্রাণনাশের চেষ্টা হতে পারে। হরিয়ানা হাইকোর্টে এই বিপদের কথা জানানোয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। আজ এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন, হরিয়ানার যমুনানগরের পুলিশ সুপার কমলদীপ গয়াল।
শুধু মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার জন্য হিন্দু মেয়ে যদি ইসলাম গ্রহণ করে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে তা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২৯ নভেম্বর এ জন্য ‘বিধিবিরুদ্ধ ধর্ম পরিবর্তন অধিনিয়ম’ নামে অধ্যাদেশ জারি করেছে উত্তরপ্রদেশে সরকার। পর দিনই বরেলীতে এক জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে নয়া অধ্যাদেশে। আজ মুফজ্ফজরনগরে দু’জনের বিরুদ্ধে ওই অধ্যাদেশ মেনে মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বিয়ে হয়নি। মেয়ের বাবার অভিযোগ, স্থানীয় এক মুসলিম যুবক তাঁর মেয়েকে ফুঁসলে বিয়ে করার চেষ্টা করছে। ওই যুবক এখন বেপাত্তা।
বিজেপি ‘ধর্মপরিবর্তনের লক্ষ্যে’ এই ধরনের বিয়েকে ‘লাভ জেহাদ’ তকমা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে গোটা দেশেই। বিজেপি শাসনাধীন রাজ্যগুলি একে একে ‘লাভ জেহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। দু’দিন আগে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদের রাজ্যেও ‘লাভ জেহাদ’ রোখার আইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিজেপি-শাসিত অসমে বিয়ের আগে ধর্ম জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
আইন করছে হরিয়ানাও। গত সপ্তাহেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল বিজ জানিয়েছেন, ‘লাভ জেহাদ’-বিরোধী আইনের খসড়া তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটিতে আছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, অ্যাডিশনাল ডিজিপি এবং অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল। এঁরা অন্যান্য রাজ্যে কী আইন রয়েছে বা হতে চলেছে, তা খতিয়ে দেখবেন। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট, হিন্দু মেয়েদের মুসলিম পরিবারে বিয়ের পিছনে ‘জেহাদি উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রচার চালিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না বিজেপি ও তাদের সরকারগুলি। একে আইনি চেহারা দেওয়ার কাজ চলছে। এরই মধ্যে হরিয়ানায় যমুনানগরের ঘটনা একটি বিপরীত ছবি সামনে এনে দিয়েছে। যা নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না কোনও দল বা সংগঠন।
যমুনানগরের পুলিশ সুপার জানান, মেয়েটি ১৯ বছরের। ছেলেটি ২১। ৯ নভেম্বর হিন্দু রীতি মেনে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। নাম বদল করেছে ছেলেটি। এর পরে তাঁরা শুধু প্রাণনাশের আশঙ্কা নয়, মেয়েটির বাড়ির তরফে তাঁদের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ আনে হাইকোর্টে। যা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা অধিকারের লঙ্ঘন। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের সুরক্ষিত আশ্রয়ে রেখেছে। মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে পুলিশ এটাও বুঝিয়েছে, দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের বিয়েও বৈধ। তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী বিবাহিত জীবন যাপনে পরিবার যেন কোনও বাধা না-দেয়।