কোন রাজ্য কত টেস্ট করেছে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা তথ্য ঘুরছে। তা নিয়ে চলছে নানা মন্তব্যও। কিন্তু এ সব তথ্যের কোনওটাই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলির দেওয়া তথ্য নয়। প্রত্যেকটি সরকারের প্রকাশিত তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে এই প্রথম আনন্দবাজার ডিজিটাল সামনে আনল কোভিড-১৯ টেস্টের তথ্য পরিসংখ্যান।
দেশের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। সে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৩৭। সে রাজ্যে টেস্ট হয়েছে ৪৩ হাজার ১৯৯ জনের। ২০১২ সালে প্রকাশিত জনগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৪২ লক্ষের মতো। সেই হিসাবে প্রতি ১০ লক্ষে টেস্টের সংখ্যা ৩৭৮।
দিল্লির জনসংখ্যা (২০১২ সাল) প্রায় এক কোটি ৯০ লক্ষ। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫১০। রাজ্যে টেস্ট হয়েছে ১১৭০৯ জনের। প্রতি ১০ লক্ষে টেস্টের সংখ্যা ৬১৬।
তামিলনাড়ুতে কোভিড-১৯ টেস্ট হয়েছে ১৯২৫৫ জনের। সে রাজ্যে মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি ৭৯ লক্ষ। সেই হিসাব ধরে প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট হয়েছে ২৮৪ জনের। সে রাজ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১১৭৩।
রাজস্থানের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৮৯ লক্ষের মতো। মোট কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৮৭৬ জনের। রাজ্যে মোট টেস্ট হয়েছে ৩৪ হাজার ৯২৮ জনের। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষে সেই সংখ্যা ৫০৭।
৭ কোটি ৩৩ লক্ষের মতো মানুষ বাস করেন মধ্যপ্রদেশে। সে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩০ জন। মোট পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪০ জনের। প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট হয়েছে ১৭৭ জনের।
২০১২ সালের প্রকাশিত জনগণনা অনুযায়ী গুজরাতের জনসংখ্যা ৬ কোটি ১৬ লক্ষের কাছাকাছি। মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৭। সেখানে মোট টেস্ট হয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৪ জনের। প্রতি ১০ লক্ষের হিসেবে সেই সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৫৯।
৫৫৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশে। সে রাজ্যের জনসংখ্যা ২০ কোটি ৪২ লক্ষ। সেখানে টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৭২০ জনের। প্রতি দশ লক্ষে টেস্টের হার ৬২।
৮ কোটি ৫৪ লক্ষ মানুষ বাস করেন অন্ধ্রপ্রদেশে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যেও। আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৩। কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৩২১ জনের। ১০ লক্ষে টেস্টের হার ১২১ জন।
কেরলে আক্রান্ত ৩৭৯ জন। মোট টেস্ট হয়েছে ১৬২৩৫ জনের। রাজ্যের জনসংখ্যা ৩ কোটি ৪৮ লক্ষের কাছাকাছি। সেই হিসাবে প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট হয়েছে ৪৬৭ জনের।
করোনা হানা দিয়েছে উপত্যকাতেও। সে রাজ্যের জনসংখ্যা ১ কোটি ২৮ লক্ষের মতো। জম্মু কাশ্মীরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৭০। করোনার পরীক্ষা হয়েছে ৪৫৬২ জনের। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষে ৩৫৬ জনের।
কর্নাটকে ৬ কোটি ২১ লক্ষের বাস। রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৮ জন। সে রাজ্যে মোট টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৯৭৯ জনের। দশ লক্ষের হিসেবে ২০৯।
২০১২ সালে প্রকাশিত জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯ কোটি ৩ লক্ষ। রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। করোনার পরীক্ষা হয়েছে ৩০৮১ জনের। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষে ৩৪ জনের।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘টেস্ট বেশি হওয়া জরুরি। তাতে হটস্পট বোঝা যায়। সংক্রমণের প্রবণতা বোঝা যায়। তাই বেশি টেস্ট সব সময়ই প্রয়োজন। শুধু রাজ্যেই নয়, গোটা দেশেই টেস্ট কম হচ্ছে। যেখানে দেশে প্রতি দিন ৪০ হাজার টেস্ট প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ২০ হাজার টেস্ট হচ্ছে।’’
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য রাজ্যে কম টেস্টের অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছেন। যথেষ্ট সংখ্যায় টেস্টিং কিট রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছিল না বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যগুলি নিজে থেকে টেস্টিং কিট অর্ডার করতে পারে না। আইসিএমআর আমদানি করে এবং রাজ্যগুলোকে পাঠায়। কেন্দ্র ৪৪ লক্ষ কিট অর্ডার করেছে, যার মধ্যে অল্প কিছু এসেছে। যদি কেন্দ্রই কিট আমদানি করতে না পারে, তাহলে রাজ্যকে কী ভাবে পাঠাবে?’’
ডেরেক আরও বলেন, ‘‘মার্চের শেষ পর্যন্ত বাংলা মাত্র ৪০টা কিট পেয়েছিল। বেশি কিট পাঠানো হচ্ছিল কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়ানো রাজ্যগুলিতে। তা ছাড়া আইসিএমআর প্রথমে বলেছিল, যাঁদের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, শুধু তাঁদেরই টেস্ট হবে। তাই উপসর্গ যাঁদের নেই, তাঁদের টেস্ট করানো হচ্ছিল না। পরে আইসিএমআর নির্দেশিকা বদলেছে। যাঁদের উপসর্গ নেই, তাঁদেরও টেস্ট করানো যাবে বলে তারা জানিয়েছে। সুতরাং এ বার সে ভাবেই কাজ হবে।’’
পঞ্জাবের জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লক্ষ। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৪। টেস্ট হয়েছে ৪৮৪৪ জনের। জনসংখ্যার নিরিখে প্রতি ১০ লক্ষে ১৭৩ জনের টেস্ট হবে।
বিহারের জনসংখ্যা ৯ কোটি ৯০ লক্ষ। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬। মোট করোনার পরীক্ষা হয়েছে ৭৭৮১ জনের। ১০ লক্ষের হিসেবে ৭৯ জনের টেস্ট হয়েছে।
করোনাভাইরাসে ওড়িশায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০। রাজ্যে টেস্ট হয়েছে ৫৫৩৭ জনের। রাজ্যের জনসংখ্যা ৪ কোটি ২৬ লক্ষের কাছাকাছি। সেই হিসাবে প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট হয়েছে ১৩০ জনের।
উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসমে ৩ কোটি ৯ লক্ষ মানুষের বাস। সে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। পরীক্ষা হয়েছে ২৯২৭ জনের, যা প্রতি ১০ লক্ষের হিসাবে ৯৫ জনের।
ছত্তীসগঢ়ে মোট করোনা আক্রান্ত ৩৩ জন। সে রাজ্যে টেস্ট হয়েছে ৪৮২১ জন। রাজ্যের জনসংখ্যা ২ কোটি ৬৩ লক্ষ। সেই হিসেবে প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট হয়েছে ১৮৩ জনের।
সারা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছিল ১৪এপ্রিল। ওই দিন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮১৫। আর টেস্ট হয়েছিল ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৯৩ জনের। ২০১২ সালে প্রকাশিত জনগণনা অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১২৬ কোটি ৫৮ লক্ষ। আর সেই জনসংখ্যার হিসেবে প্রতি ১০ লক্ষে ১৯৩ জনের করোনার পরীক্ষা হয়েছে।