‘কোভ্যাক্সিন’-এর হিউম্যান ট্রায়াল চলছে এমসে।
করোনার টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে এমসে। কিন্তু টিকা নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়ে যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের অনেকের শরীরেই মিলছে করোনার অ্যান্টিবডি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে অন্তত ১ জনের শরীরে মিলেছে ওই অ্যান্টিবডি। স্বেচ্ছাসেবক বাছাই করতে গিয়েই ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে। তার জেরে টিকার হিউম্যান ট্রায়াল নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছে ওই হাসপাতালটি। এমস-সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁদের শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি ধরা পড়েছে। তাঁর অর্থ, ওই আবেদনকারীরা কখনও না কখনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন দেশের মতো ভারতও করোনার টিকা তৈরির গবেষণা শুরু করেছে। আশার আলো দেখাচ্ছে হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি করা করোনার টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’। তারই প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে দেশের ১২টি হাসপাতালে। তার মধ্যে রয়েছে দিল্লির এমসও। সেখানে ১০০ জনকে ওই টিকা দেওয়া হবে। সে জন্য চলছে স্বেচ্ছাসেবক বাছাই পর্ব। স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়ে এমসে আবেদন করেছেন সাড়ে ৩ হাজার জন। কিন্তু তাঁদের ৮০ জনের উপর পরীক্ষা চালিয়ে মাত্র ১৬ জন ব্যক্তিকে ‘উপযুক্ত’ হিসাবে বাছাই করা হয়েছে।
এমসের এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবক চাই। কিন্তু বাতিলের হার (রিজেকশন রেট) বেশি হচ্ছে। আবেদনকারীদের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশের শরীরে আমরা করোনার অ্যান্টিবডি পেয়েছি। তার অর্থ, তাঁরা ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিদের শরীরে যকৃৎ এবং বৃক্ক ঠিক ভাবে কাজ করে না।’’ ওই চিকিৎসকের মতে, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেলে ভ্যাক্সিন কেমন কাজ করছে তা বুঝতে পারা শক্ত।
আরও পড়ুন: সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ বিহার সরকারের
হিউম্যান ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। এ জন্য ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে বয়স হতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক হতে চাইলে তাঁর কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুসের সমস্যা থাকলে চলবে না। ডায়াবিটিস বা হাইপারটেনশনের রোগী হলে তাঁদের আবেদন গ্রাহ্য হবে না। এই সব শর্ত ঠিকঠাক মিলে গেলে তবেই স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে বাছাই করা হয়ে থাকে। সপ্তাহ দুয়েক আগে এমসে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমস্ত পরীক্ষাগুলির পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টও করা হয়েছে। তাতেই ধরা পড়েছে ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ২৪ জুলাই তার মধ্যে দিল্লিবাসী এক যুবকের শরীরে প্রথম ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকা দেওয়া হয়। এমসের চিকিৎসকরা বলছেন, সপ্তাহখানেক সময় গড়ালেও ওই যুবক এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক। তিনি কোনও অসুবিধা বোধ করছেন না বলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পরীক্ষা করার পর ‘কোভ্যাক্সিন’-এর পরবর্তী ডোজ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার আট শতাংশের কম, সুস্থ ৪৪ হাজার
কিছু দিন আগে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে একটি সমীক্ষা পেশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তার মূল কথা ছিল, দেশের রাজধানীর প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লির ১১টি জেলার ২১ হাজার ৩৮৭ জনের মধ্যে সেরোলজিক্যাল সার্ভে চালিয়েই ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল। এমসের স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ অভিযানেও কি তারই ইঙ্গিত মিলছে?