দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ এ বার সওয়া লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে সোমবার প্রথমবারের জন্য আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ লক্ষের গণ্ডি। মঙ্গলবার তা একটু কমেছিল। বুধবার তা হয়েছিল ১.১৫ লক্ষ। বৃহস্পতিবার তা হল ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৭৮৯ জন। দেশে একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এই সংখ্যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। রোজ এই সংখ্যক আক্রান্ত বৃদ্ধির জেরে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে পেরিয়ে গেল ৯ লাখের গণ্ডি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ১০ হাজার ৩১৯।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৯০৭ জন। সে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি খারাপ হচ্ছে মুম্বইয়ের অবস্থা। দৈনিক মৃত্যুও ওই রাজ্যে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের। দেশের মোট সক্রিয় রোগীর অর্ধেকেরও বেশি শুধু মহারাষ্ট্রেই।
গত এক সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলির পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। এগুলির মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থা ছত্তীসগঢ়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৩১০ জন। করোনার প্রথম পর্বেও এত খারাপ পরিস্থিতি ছিল না এই রাজ্যে। কর্নাটকেও দিন দিন অবনতি হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির। একই অবস্থা রাজধানী দিল্লিতেও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন আক্রান্ত ৫ হাজার ৫০৬ জন। এ বছরে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। উত্তরপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি। মধ্যপ্রদেশেও কোভিড পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সেখানে দৈনিক আক্রান্ত ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। তামিলনাড়ুতেও তা প্রায় ৪ হাজার, গুজরাত এবং কেরলে সাড়ে ৩ হাজার। গত ক’দিনে তেলঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানাতে বেড়েছে দৈনিক আক্রান্ত। ওই রাজ্যগুলি বৃহস্পতিবার দৈনিক আক্রান্ত আড়াই হাজারের আশপাশে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ডে দৈনিক আক্রান্ত এক হাজার ছাড়িয়েছে। হাজারের কম হলেও ওড়িশা, গোয়া, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশেও দেশের দৈনিক আক্রান্ত বাড়ছে।
এই নতুন আক্রান্ত বৃদ্ধি দেশের সক্রিয় রোগীর সংখ্যাকে হু হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ হাজার ৮৪৬। এখন দেশে মোট সক্রিয় রোগী রয়েছেন ৯ লক্ষ ১০ হাজার ৩১৯ জন। গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল সবথেকে বেশি। তার পর থেকে অল্প অল্প করে হলেও তা কমতে শুরু করে। কমতে কমতে এ বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তা দেড় লক্ষের নীচে নেমেছিল। তার পর এই দেড় মাসের মধ্যে সক্রিয় রোগী এই পরিমাণ বাড়ল।
সক্রিয় রোগীর পাশাপাশি দেশে দৈনিক মৃত্যুও বেড়েছে গত দেড় সপ্তাহে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৬৮৫ জনের। এ নিয়ে করোনাভাইরাস দেশে প্রাণ কাড়ল ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৬২ জনের। দেশের মোট মৃত্যুর অর্ধেকই মহারাষ্ট্রে। পঞ্জাব, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং দিল্লিতেও বে়ড়েছে দৈনিক মৃত্যু। যদিও দেশে টিকাকরণ চলছেও জোরকদমে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে টিকা পেয়েছেন ৩১ লক্ষ ২১ হাজার ১৯৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ৯ কোটি ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৭৩ কোভিড টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে।