গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দু’দিন লাফিয়ে বাড়ার পর শুক্রবার সামান্য লাগাম পড়ল দেশের করোনা সংক্রমণে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমল এক হাজার দু’শোরও বেশি। অথচ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৮ হাজারেরও বেশি। এত সংখ্যক বেশি টেস্ট হওয়ার পরেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার অনেকটাই নীচে নেমেছে। এই প্রবণতা স্বস্তিদায়ক হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে, এমন পূর্বাভাস করতে পারছেন না কেউ। সুস্থতার হারও বেড়ে ৯১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে উদ্বেগ বেড়েছে মৃত্যু নিয়ে। বৃহস্পতিবারের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬ জন।
সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই দেশে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। প্রায় প্রতিনদিনই কমছিল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই প্রবণতায় সবচেয়ে কম মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন (৩৬ হাজার ৪৭০ জন) ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার। কিন্তু বুধ ও বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছিল। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৬৪৮ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৮৮১। বুধবার ছিল ৪৩ হাজার ৮৯৩। শুক্রবারের আক্রান্ত মিলিয়ে দেশে কোভিড পজিটিভ-এর সংখ্যা বেড়ে হল ৮০ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৫১।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
সংক্রমণে স্বস্তির উল্টো ছবি মৃত্যু নিয়ে। নতুন আক্রান্তের সংখ্যার মতো মৃত্যুর সংখ্যা কমছিল প্রতি দিন। গত ২৬ অক্টোবর সোমবার এই সংখ্যা নেমে গিয়েছিল ৪৮০-তে। তার পর থেকে অল্প অল্প করে বাড়ছিল। কিন্তু শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী মৃত্যু অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের মধ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৫৬৩ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৫১৭। তার আগের দিন ছিল ৫০৮। এই প্রবণতা বজায় থাকলে স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া হতে বাধ্য।
আরও পড়ুন: শাহ-ধনখড় কথায় বাড়ল রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের জল্পনা
এক দিনে শুধু আক্রান্তের সংখ্যা কম-বেশি দিয়ে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত প্রবণতা বোঝানো কঠিন। তার জন্য কত টেস্ট হয়েছে, এবং তার মধ্যে কত টেস্ট পজিটিভ এসেছে, অর্থাৎ ‘পজিটিভিটি রেট’ও বিচার্য। প্রতিদিন কত সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, এবং তার মধ্যে ১০০ জনে কত জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হয় ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। শুক্রবার যেমন আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু টেস্ট হয়েছে অনেক বেশি। ফলে প্রকৃতপক্ষে আগের দিনের সমান টেস্ট হলে আরও অনেক কম মানুষ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। শুক্রবারের বুলেটিনে এই সংক্রমণের হার ৪.১৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার যা ছিল ৪.৬৪ শতাংশ। শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬৪৮। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৬০।
সংক্রমণের পাশাপাশি সুস্থতার হার বৃদ্ধিতেও স্বস্তি মিলেছে। শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছন ৫৭ হাজার ৩৮৬ জন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়েছিলেন ৫৬ হাজার ৪৮০ জন। এই নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৭৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৭৫। এই মুহূর্তে গোটা দেশে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৬ জন। সেই সঙ্গে এই প্রথম সুস্থতার হার ৯১ শতাংশের উপরে উঠল। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী সুস্থতার হার ৯১.১৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার এই হার ছিল ৯০.৯৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: মুকুলকে একুশের ভোটে ‘বড়’ কাজে ব্যবহার করতে চায় বিজেপি
বিশ্বের করোনা চিত্রে বড়সড় কোনও রদবদল নেই। দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে আমেরিকা। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৯১। দ্বিতীয় স্থানে ভারত। তার পরে ব্রাজিল। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৭৬। তবে মৃতের সংখ্যায় ব্রাজিল ও আমেরিকার পরে ভারতের স্থান। আমেরিকায় মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৬৮ জনের। ব্রাজিলে কোভিডের বলি হয়েছেন ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৬৯ জন।
দিল্লিতে কয়েক দিন ধরেই সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সেখানে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। রাজধানীতে শুক্রবারও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭৩৯ জন। তবে মোট আক্রান্তের সংখ্যায় মহারাষ্ট্র এখনও সবার উপরে। শুক্রবার পর্যন্ত পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৬৮ জন। এ ছাড়াও উদ্বেগ রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৭৯), কর্নাটক (৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৮০৯), তামিলনাড়ু (৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৪০৩), উত্তরপ্রদেশ (৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮৯৫) এবং কেরল (৪ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৮৪ জন) নিয়ে। অস্বস্তি বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যানও। এ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৯ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬৯২। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে কেরলে— ৭ হাজার ২০ জন। মহারাষ্ট্রে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯০২।