গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দু’দিন আগেও দেশে প্রতিদিন নতুন করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা নেমেছিল ৩৬ হাজারের ঘরে। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা পৌঁছে গেল প্রায় ৫০ হাজারে। একই সঙ্গে দেশে মোট আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেল ৮০ লক্ষ। বেড়েছে সংক্রমণের হারও। এখনই দ্বিতীয় ঢেউ না বললেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, উৎসবের মরশুমে জনসমাগমের জেরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় এই বৃদ্ধি হতে পারে। মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে সামান্য। তবে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে সুস্থতার হার ৯১ শতাংশ ছুঁইছুঁই।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী। গত এক মাসে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে কমতে ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার পৌঁছে গিয়েছিল ৩৬ হাজার ৪৭-এ। সেখান থেকে আবার বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছে। বুধবার এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৪৩ হাজার ৮৯৩। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড পজিটিভ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৮১ জন। এই নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৮০ লক্ষ ৪০ হাজা ২০৩।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সুস্থতার হারেও বৃদ্ধি হচ্ছে নিয়মিত। অর্থাৎ প্রতি দিন আরও বেশি মানুষ করোনামুক্ত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে সুস্থতার হার। কোভিড যুদ্ধে এটাই স্বস্তি দিচ্ছে চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের। বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৬ হাজার ৪৮০ জন মানুষ। এই নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৭৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৮৯। এই মুহূর্তে গোটা দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮৭। সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে ৯০.৯৯ শতাংশ। বুধবার এই হার ছিল ৯০.৮৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পরিবারে পরিবর্তন কেন্দ্রীয় শাসনে বঙ্গ বিজেপি
সুস্থতার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি দিন যত সংখ্যক কোভিড টেস্ট করা হয়, তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক। করোনা সংক্রমণের প্রবণতা বুঝতে এই হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট টেস্টের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৬০। বুধবারের চেয়ে যা প্রায় ৯ হাজার বেশি। এর মধ্যে ৪৯ হাজারের বেশি রিপোর্ট পজিটিভ আসায় সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে ৪.৬৪ শতাংশ। বুধবার এই হার ছিল ৪.১১ শতাংশ।
সংক্রমিতের সংখ্যার সঙ্গে সমান তালে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী দেশে করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৫১৭ জনের। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ৫০৮। দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট কোভিডের বলি হয়েছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫২৭ জন।
উহান থেকে গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কিছু দিন পর থেকেই মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে আমেরিকা। ভাইরাসকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সে দেশে মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ লক্ষ ৫৬ হাজার ৪১৩। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ২৭০ জন। মৃতের সংখ্যার নিরিখে অবশ্য আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরে ভারতের স্থান। আমেরিকা ও ব্রাজিলে কোভিডের বলি হয়েছেন পর্যায়ক্রমে ২ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৮৫ জন এবং ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৫৬ জন।
আরও পড়ুন: রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি কমানোর রায় বহাল সুপ্রিম কোর্টে
রাজ্যগুলির মধ্যে মোট আক্রান্তের নিরিখে বরাবরই শীর্ষে মহারাষ্ট্রে। সেই প্রবণতা এখনও অব্যাহত। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৬৬ জন। এ ছাড়াও উদ্বেগ রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮ লক্ষ ১৪ হাজার ৭৭৪), কর্নাটক (৮ লক্ষ ১২ হাজার ৭৮৪), তামিলনাড়ু (৭ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৫১), উত্তরপ্রদেশ (৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৪ জন) এবং কেরল (৪ লক্ষ ১১ হাজার ৪৬৪ জন)। অস্বস্তি বাড়ছে দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যানও। রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৬৭৩টি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ১৪ জন। অন্য দিকে, এ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯২৪ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৭০৩।