গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০ জুলাই সংখ্যাটা ছিল ১১ লাখ, ২৩ জুলাই ১২ লাখ। আর ২৬ জুলাই সংখ্যাটা প্রায় ১৪ লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এ ভাবেই দেশে করোনা আক্রান্তের গ্রাফটা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। দৈনিক আক্রান্তের ছবিটাও কিন্তু একেবারেই স্বস্তিদায়ক নয়। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের নিরিখেও একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ হাজার ৬৬১ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫২২।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার কিছুটা কমে হয়েছে ১১ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ১১.৬২ শতাংশ। প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার।
মৃত্যুর নিরিখে স্পেন ও ফ্রান্সকে আগেই টপকে গিয়েছে ভারত। সামনেই রয়েছে ইটালি। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, রবিবার দেশে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭০৫ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬৩।
আরও পড়ুন: চব্বিশ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত ৪২
এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১৩ হাজার ৩৮৯ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে ৩ হাজার ৮০৬ জনের। ৩ হাজার ৪০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে তামিলনাড়ুতে। গুজরাতে ২ হাজার ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনার কারণে। কর্নাটক (১,৭৯৬), উত্তরপ্রদেশ (১,৩৮৭) ও পশ্চিমবঙ্গে (১,৩৩২) জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৯৮৫), মধ্যপ্রদেশ (৭৯৯), রাজস্থান (৬১৩), তেলঙ্গানা (৪৫৫), হরিয়ানা (৩৮৯), জম্মু ও কাশ্মীর (৩০৫), পঞ্জাব (২৯১), বিহার (২৩৪) ও ওড়িশা (১৩০)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি। তবে শেষ ক’দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যার বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্রে বল্গাহীন ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন তিন লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৬৮ জন। তামিলনাড়ুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার ৭৩৭ জন। জুনের তুলনায় বিগত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ২৯ হাজার ৫৩১ জন।
গত কয়েক দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে মারাত্মক ভাবে বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। যার জেরে সংক্রমণ তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই দুই রাজ্য। কর্নাটকে মোট আক্রান্ত ৯০ হাজার ৯৪২ জন ও অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্ত ৮৮ হাজার ৬৭১ জন। উত্তরপ্রদেশ (৬৩,৭৪২), পশ্চিমবঙ্গে (৫৬,৩৭৭), গুজরাত (৫৪,৬২৬)।
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাড়ে আট লক্ষেরও বেশি মানুষ।
গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে রোজ দু’হাজারেরও বেশি জন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ রাজ্যের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২ হাজার ৪০৪ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৬ হাজার ৭৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৩২। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৫ হাজার ৬৫৪ জন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)