গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ হাজার ৯১৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
২০ জুলাই ১১ লাখ, ২৩ জুলাই ১২ লাখ, ২৫ জুলাই ১৩ লাখ— এ ভাবেই বাড়ছে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এই আক্রান্ত বৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের আধিকারিক থেকে চিকিৎসকদের। দৈনিক নতুন সংক্রমণ শুক্রবারই পৌঁছেছিল ৪৯ হাজারের গণ্ডিতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ হাজার ৯১৬ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। এই বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ১৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৬১।
আক্রান্তের পাশাপাশি সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১১.৬২ শতাংশ।
মৃত্যুর নিরিখে স্পেন ও ফ্রান্সকে আগেই টপকে গিয়েছে ভারত। শনিবার দেশে মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার পা়র করল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৭৫৭ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৩১ হাজার ৩৫৮ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস।
এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১৩ হাজার ১৩২ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৭৭৭ জনের। তিন হাজার ৩২০ জনের মৃত্যু নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। গুজরাতে দু’হাজার ২৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনার কারণে। কর্নাটক (১,৭২৪), উত্তরপ্রদেশ (১,৩৪৮) ও পশ্চিমবঙ্গে (১,২৯০) মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৯৩৩), মধ্যপ্রদেশ (৭৯১), রাজস্থান (৬০২), তেলঙ্গানা (৪৫৫), হরিয়ানা (৩৮২), জম্মু ও কাশ্মীর (২৯৬), পঞ্জাব (২৮২), বিহার (২২০) ও ওড়িশা (১২০)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি। তবে শেষ ক’দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যার বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে আট লক্ষ মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩২ হাজার ২২৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এক দিনের নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট আট লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৩১ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্রে বল্গাহীন ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ন’হাজার নতুন সংক্রমণের জেরে সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন তিন লক্ষ ৫৭ হাজার ১১৭ জন। প্রায় সাড়ে ছ’হাজার বেড়ে তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৯৯ হাজার ৭৪৯ জন। জুনের তুলনায় বিগত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ২৮ হাজার ৩৮৯ জন।
গত কয়েক দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। যার জেরে সংক্রমণ তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই দুই রাজ্য। কর্নাটকে মোট আক্রান্ত ৮৫ হাজার ৮৭০ জন ও অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্ত ৮০ হাজার ৮৫৮ জন। উত্তরপ্রদেশ (৬০,৭৭১), পশ্চিমবঙ্গে (৫৩,৯৭৩), গুজরাত (৫৩,৫৪৫) ও তেলঙ্গানাতেও (৫২,৪৬৬) আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৩৪,১৭৮), বিহার (৩৩,৯২৬), হরিয়ানা (২৯,৭৫৫), অসম (২৯,৯২১), মধ্যপ্রদেশ (২৬,২১০), ওড়িশা (২২,৬৯৩), জম্মু ও কাশ্মীর (১৬,৯৯৫), কেরল (১৬,৯৯৫) ও পঞ্জাব (১২,২১৬)। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত এখনও পাঁচ হাজারের আশপাশে।
গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে রোজ দু’হাজারেরও বেশি জন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ রাজ্যের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে দু’হাজার ২১৬ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৩ হাজার ৯৭৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৯০ জন রাজ্যবাসীর প্রাণ কাড়ল করোনা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)