দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। প্রায় দেড় মাস পর দেশের দৈনিক সংক্রমণ পৌঁছে গেল ১৭ হাজারের কাছাকাছি। মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ লাগামছাড়া হওয়াতেই এই বৃদ্ধি। সেখানকার ওয়ায়িম জেলার একটি স্কুলের হস্টেলে ২২৯ জন আবাসিক একসঙ্গে কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। তার মধ্যে ২২৫ জন ছাত্র এবং ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। ওই হস্টেলকে কন্টেনমেন্ট জোনও ঘোষণা করা হয়েছে। মুম্বই ছাড়াও সে রাজ্যের নাসিক, পুণে, আকোলা এবং নাগপুর এলাকায় বেড়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। এই বৃদ্ধির জেরে মহারাষ্ট্রে লকডাউনের আশঙ্কা আরও জোরালো হল।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনাভাইরাসে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৬ হাজার ৭৩৮ জন। এই সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মহারাষ্ট্রেই। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮০৭ জন। প্রায় ৪ মাস পর মহারাষ্ট্রের দৈনিক সংক্রমণ এই সংখ্যায় পৌঁছল। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৮ হাজার ১৪২। তার পর থেকে যত দিন গিয়েছে মহারাষ্ট্রের দৈনিক সংক্রমণ কমেছে। কমে দু-আড়াই হাজারের ঘরেই ঘোরাফেরা করছিল বেশ কয়েক সপ্তাহ। কিন্তু গত কয়েক দিনে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেল। এ নিয়ে মহারাষ্ট্রে এখনও অবধি মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লক্ষ ২১ হাজার ১১৯ জন।
মহারাষ্ট্রের গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রের মৃত্যু সংখ্যাও যথেষ্টই দুশ্চিন্তার। ৮০ জন মারা গিয়েছেন সেখানে। ডিসেম্বরের পর করোনার জেরে ফের এত সংখ্যক লোক মারা গেলেন সেখানে।
তবে দেশের দৈনিক সংক্রমণের চার ভাগের তিন ভাগই মহারাষ্ট্র এবং কেরল— এই দু’টি রাজ্য থেকে। দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে নিয়ন্ত্রণে এলেও গত কয়েক মাস ধরেই কেরলের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টাতেও এই দক্ষিণের রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ১০৬ জন। তবে দেশের বাকি সব রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৫০০-র নীচে রয়েছে। যদিও পঞ্জাব, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে গত কয়েক দিনে দৈনিক সংক্রমণ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পঞ্জাবে তা ৫৫৮। যা বিগত দিনগুলির তুলনায় অনেকটা বেশি।
দৈনিক সংক্রমণের পাশাপাশি দেশের দৈনিক মৃত্যুও বেড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। ১৩৮ জন করোনা বলি হয়েছেন। এই নিয়ে দেশে এখনও অবধি প্রাণ হারালেন ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭০৫ জন। এ দেশে মৃত্যুহার ১.৪২ শতাংশ। দেশের দৈনিক মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই মহারাষ্ট্রে। সেখানে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজার ৯৩৭ জন। ১২ হাজারের বেশি আক্রান্ত নিয়ে তামিলনাড়ু এবং কর্নাটক রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রাণহানিও ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।
দেশে করোনা আক্রান্তের সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটা শুরু থেকেই আশাব্যঞ্জক। এখনও অবধি ১ কোটি ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত কয়েক মাসে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা যে ভাবে ধারাবাহিক ভাবে কমছিল সেই প্রবণতাতেও হঠাৎই ভাটা পড়েছে। কমতে কমতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দেড় লক্ষের নীচে নেমেছিল। বৃহস্পতিবার তা ৪ হাজার ৮০১ বেড়ে আবার দেড় লক্ষ পার করেছে। দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০৮ জন। দেশে করোনার প্রভাব যখন থিতিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। সে সময়ই সংক্রমণের এই বাড়বাড়ন্ত দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা তৈরি করছে।