দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ১০ জন।। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দিন তিনেক ধরে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে দেশের দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার ৭৫ হাজারে নেমেছিল। গত কালের তুলনায় আজ তা একটু বাড়লেও ৮৩ হাজারেই আবদ্ধ রয়েছে। সঙ্গে সংক্রমণের হারও গতকালের তুলনায় বেশ খানিকটা কমেছে। পাশাপাশি সুস্থ হওয়ার সংখ্যা আজও দৈনিক সংক্রমণের থেকে বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৪৭ জন। ওই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০ হাজার ২৯১ ও ১৩ হাজার ২১৮। গত দেড় মাস ধরেই ওই দু’টি দেশের তুলনায় ভারতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে আমেরিকায় মাসখানেক পর আবার দৈনিক সংক্রমণ ৬০ হাজার ছুঁলো।
বুধবার ৭৫ হাজার বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ১০ জন। সেখানে বিশ্বের আক্রান্তের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৬৮ লক্ষ ৯৫ হাজার ও তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৪৫ লক্ষ ৭২ হাজার।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
কোভিড আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার হার ভারতে শুরু থেকেই আশাব্যাঞ্জক। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৪৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬১৩ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। যা গোটা বিশ্বের মধ্যেই সর্বোচ্চ। দেশের মোট আক্রান্তের ৮১ শতাংশই সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৮৯ হাজার ৭৪৬ জন। গত কাল সুস্থ হয়েছিলেন এক লক্ষেরও বেশি। নতুন আক্রান্তের থেকে বেশি মানুষ সুস্থ হওয়ার জেরে দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা কমছে। এখন ভারতে অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন ৯ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩৭৭ জন।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত দু’দিন ধরেই তা আট শতাংশে আবদ্ধ। আজ ৮.৭৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে ন’লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৮৩ জনের। যা গতকালের তুলনায় বেশি হলেও গত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় কম।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির তুলনায় মৃত্যুর হার কম হলেও, ভারতে দিন দিন বাড়ছে মোট মৃত্যুর সংখ্যা। আজ মোট মৃত্যু ৯০ হাজার পার করল। সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই রোজ এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮৫ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৯০ হাজার ২০ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছে করোনা। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ৩৩ হাজার ৪০৭ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৯৪৭ জনের। তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটকে মৃতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে বাড়ছে। অন্ধ্রপ্রদেশে করোনা প্রাণ কেড়েছে ৫ হাজার ৪৬১ জনের। উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে মোট মৃত্যু পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ (৪,৪৮৩), গুজরাত (৩,৩৫২), পঞ্জাব (২,৯২৬) ও মধ্যপ্রদেশ (২,০৩৫) মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। রাজস্থান, হরিয়ান, তেলঙ্গানা ও জম্মু ও কাশ্মীরের মোট মৃত্যু হাজার ছাড়িয়ে বাড়ছে। এর পর তালিকায় রয়েছে বিহার, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, অসম, কেরল, উত্তরাখণ্ড, পুদুচেরী, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মোট আক্রান্তের তালিকায় শুরু থেকেই দেশের শীর্ষে মহারাষ্ট্র। দেশের মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশেরও বেশি সেখানে। এখনও অবধি ১২ লক্ষ ৪২ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। ৬ লক্ষ ৩৯ হাজার আক্রান্ত নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অন্ধ্রপ্রদেশ। তামিলনাড়ু ও কর্নাটকে মোট আক্রান্ত যথাক্রমে পাঁচ লক্ষ ৫২ হাজার ও ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার। উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাটা সাড়ে তিন লক্ষ পেরিয়েছে। দিল্লিতেও আজ আড়াই লক্ষ পেরলো। পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্ত ২ লক্ষ ৩১ হাজার। ওড়িশাতে ইদানীং বল্গাহীনভাবে বেড়ে মোট আক্রান্ত এখন ১ লক্ষ ৮৮ হাজার। তেলঙ্গানাতে তা এক লক্ষ ৭৭ হাজার। গত কয়েক সপ্তাহে বিহারে (১.৭১ লক্ষ) কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা সংক্রমণ। অসম (১.৬১ লক্ষ), কেরল (১.৪২ লক্ষ), গুজরাত (১.২৬ লক্ষ), রাজস্থান (১.১৮), হরিয়ানা (১.১৪ লক্ষ), মধ্যপ্রদেশে (১.১০ লক্ষ) আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। পঞ্জাবেও মোট আক্রান্ত এক লক্ষ পেরিয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, গোয়া, পুদুচেরি, ত্রিপুরা, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলি।
পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই তিন হাজারের বেশি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে তিন হাজার ১৮২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন দু’লক্ষ ৩১ হাজার ৪৮৪ জন। যদিও এর মধ্যে দু’লক্ষেরও রোগী বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬২ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন চার হাজার ৪৮৩ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)