গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই ৫১৮ জন। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
লাফিয়ে লাফিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের আধিকারিক থেকে চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার দেশে মোট আক্রান্ত আক্রান্ত ১২ লক্ষ ছাড়াল। ৩৯-৪০ হাজার করে দৈনিক বৃদ্ধির পর গত দু’দিন ৩৭ হাজারের গণ্ডিতে বাড়ছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার সেই বৃদ্ধি এক লাফে বেড়ে প্রায় ৪৬ হাজার হল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রেকর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজার ৭২০ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন, একদিনে বৃদ্ধির নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ১২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৩৫ জন।
আক্রান্তের পাশাপাশি সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১৩.৩ শতাংশ।
আক্রান্তের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে মৃত্যু বেড়ে ২৯ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। গত এক মাসে দৈনিক মৃত্যু ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০-র গণ্ডিতে। বৃহস্পতিবার তা লাফ দিয়ে হাজার ছাড়াল! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১২৯ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ২৯ হাজার ৮৬১ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস।
এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১২ হাজার ৫৫৬ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৭১৯ জনের। তিন হাজার ১৪৪ জনের প্রাণহানি নিয়ে মৃত্যু-তালিকার তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫১৮ জনের। গুজরাতে দু’হাজার ২২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনার কারণে। কর্নাটক (১,৫১৯), উত্তরপ্রদেশ (১,২৬৩) ও পশ্চিমবঙ্গে (১,২২১) মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮২৩), মধ্যপ্রদেশ (৭৭০), রাজস্থান (৫৮৩), তেলঙ্গানা (৪৩৮), হরিয়ানা (৩৭২), জম্মু ও কাশ্মীর (২৭৩), পঞ্জাব (২৬৯), বিহার (২১৭, গত দু’দিন অপরিবর্তিত) ও ওড়িশা (১০৮)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি। তবে শেষ ক’দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যার বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬৩ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৯ হাজার ৫৫৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এক দিনের নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট সাত লক্ষ ৮২ হাজার ৬০৬ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্রে বল্গাহীন ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি নতুন সংক্রমণের জেরে সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন তিন লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০৭ জন। প্রায় ছ’হাজার বেড়ে তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৯২ জন। জুনের তুলনায় বিগত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ২৬ হাজার ৩২৩ জন।
বিগত কয়েক দিনে কর্নাটকে দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে চার হাজারের আশেপাশে। যার জেরে সংক্রমণ তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্য। সেখানে মোট আক্রান্ত ৭৫ হাজার ৮৩৩ জন। অন্ধ্রপ্রদেশেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছ’হাজার জন। যার জেরে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭১৩ জন। উত্তরপ্রদেশ (৫৫,৫৮৮), গুজরাত (৫১,৩৯৯), তেলঙ্গানা (৪৯,২৫৯) ও পশ্চিমবঙ্গে (৪৯,৩২১) আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৩২,৩৩৪), বিহার (৩০,৩৬৯), হরিয়ানা (২৮,১৮৬), অসম (২৬,৭৭২), মধ্যপ্রদেশ (২৪,৮৪২), ওড়িশা (১৯,৮৩৫), জম্মু ও কাশ্মীর (১৫,৭১১), কেরল (১৫,০৩২) ও পঞ্জাব (১১,৩০১)। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড,
পশ্চিমবঙ্গেও রোজ কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি (২,২৯১)। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মোট আক্রান্ত হলেন ৪৯ হাজার ৩২১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ২২১ জন রাজ্যবাসীর প্রাণ কাড়ল করোনা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)