গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৭ হাজার ৯৮১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
করোনার প্রতিষেধক বাজারে এলে তা কী ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, সেই রূপরেখা তৈরি বলে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংক্রমণ হার কম ও সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশি হলেও দেশে করোনার দাপট এখনও অব্যাহত রয়েছে। দেশে মোট মৃত্যুও সোমবার ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত পাঁচদিনের থেকে নতুন সংক্রমণ একটু কমেছে। যদিও সেই সংখ্যাও আমেরিকা ও ব্রাজিলের থেকে বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৭ হাজার ৯৮১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে, আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪২ হাজার ৯৩৬ ও ২৩ হাজার ১০১ জন। অর্থাৎ এক দিনে আক্রান্ত বৃদ্ধির নিরিখে আমেরিকা ও ব্রাজিলের থেকে এগিয়ে ভারত। ক্রমাগত এই বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হলেন ২৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬৬৩ জন। সেখানে বিশ্বে প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৫৪ লক্ষ ৩ হাজার ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৩৩ লক্ষ ৪০ হাজার।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হার রয়েছে নয় শতাংশের কম। যা বেশ স্বস্তিদায়ক। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার ৭.৯২ শতাংশ। অগস্টের শুরু থেকেই দেশে করোনা পরীক্ষাও হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। গত তিন দিন আট লক্ষের বেশি জনের পরীক্ষা হয়ছিল। আজ তা কমে হয়েছে ৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৯৭।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের সংখ্যা যেমন রোজ বাড়ছে, তেমনই প্রচুর মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন। দেশে কোভিড রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান শুরু থেকেই স্বস্তি দিয়ে আসছে। গত ক’দিনে রোজই ৫০ হাজারেও বেশি মানুষ সুস্থ হচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত মোট ১৯ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৪২ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭২.৫১ শতাংশ আক্রান্ত সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৮৪ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
স্পেন, ফ্রান্স, ইটালির পর ব্রিটেনকেও পিছনে ফেলে, মৃত্যর নিরিখে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। যদিও দেশে মৃত্যুর হার ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৯৪১ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৫০ হাজার ৯২১ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ২০ হাজার ৩৭ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত ৫ হাজার ৭৬৬ জন। দেশের রাজধানীতে সেই সংখ্যাটা ৪ হাজার ১৯৬ জন।
চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে কোভিডের কারণে এখনও অবধি ৩ হাজার ৯৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুজরাতে ২ হাজার ৭৮৫ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। অন্ধ্রপ্রদেশ (২,৬৫০), উত্তরপ্রদেশ (২,৪৪৯) ও পশ্চিমবঙ্গে (২,৪২৮) মৃতের সংখ্যা রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (১,১০৫), রাজস্থান (৮৭৬), তেলঙ্গানা (৭০৩), পঞ্জাব (৮১২), হরিয়ানা (৫৩৮), জম্মু ও কাশ্মীর (৫৪২), বিহার (৪৬১), ওড়িশা (৩৪৩), ঝাড়খণ্ড (২৪৪), উত্তরাখণ্ড (১৫২), ছত্তীসগঢ় (১৪১), পন্ডিচেরী (১১০) ও গোয়া (১০৪)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্র সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত প্রায় ৬ লক্ষ ছুঁইছুঁই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৫ জন। সংক্রমণ তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮২৯ জন। সংক্রমণের নিরিখে চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট আক্রান্ত হয়েছেন আজ দু’লক্ষ ২৬ হাজার ৯৬৬। তবে জুলাই থেকেই রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধিতে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। রাজধানীতে এখনও অবধি মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ৫২ হাজার ৫৮০ জন। মোট আক্রান্তের নিরিখে দিল্লিকে পিছনে ফেলল উত্তরপ্রদেশ। সেখানে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪১৮ জন। পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৯৮ জন। বিহারেও মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়েছে গিয়েছে।
তেলঙ্গানা (৯২,২৫৫), গুজরাত (৭৮,৬৮০), অসম (৭৬,৮৭৫), রাজস্থান (৬১,২৯৬) ও ওড়িশাতে (৬০,০৫০) আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, জম্মু ও কাশ্মীর, পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড ও গোয়ার মতো রাজ্য। ত্রিপুরা, মণিপুর, হিমাচল প্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখনও দশ হাজারের অনেক কম।
পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, নতুন করে ৩ হাজার ৬৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। করোনার কবলে রাজ্যে এখনও অবধি মোট প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪২৮ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)