গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
১১ হাজার ছাড়িয়ে গেল দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা। শুধু তা-ই নয়, উদ্বেগ বাড়িয়ে দেশে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হল দু’হাজারেরও বেশি মানুষের। আক্রান্ত সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে দু’হাজার ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে মৃত্যুর নিরিখে যা এখও অবধি সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির জেরে ১০ হাজারের গণ্ডি পার করল মৃত্যুর সংখ্যা। দেশে এখনও অবধি মোট ১১ হাজার ৯০৩ জন প্রাণ হারালেন করোনার কারণে।
১১ হাজারের মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩৭ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৪০৯ জন মারা গিয়েছেন সেখানে। মৃত্যু বাড়ছে রাজধানী দিল্লিতেও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বৃদ্ধির জেরে গুজরাতকে ছাপিয়ে মৃত্যু তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে এল দিল্লি (১,৮৩৭)। গুজরাত মারা গিয়েছেন এক হাজার ৫৩৩ জন। তামিলনাড়ুতে ৫২৮ জন। মৃত্যুর নিরিখে দেশের পঞ্চম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে এখনও অবধি ৪৯৫ জন মারা গিয়েছেন কোভিডে। এর পর রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৪৭৬), উত্তরপ্রদেশ (৪১৭), রাজস্থান (৩০৮), তেলঙ্গানা (১৯১), হরিয়ানা (১১৮)।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০ হাজার ৯৭৪ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট তিন লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৫ জন আক্রান্ত হলেন দেশে। রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র (১,১৩,৪৪৫)। হু হু করে সংক্রমণ বাড়ছে সেখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় দু’হাজার ৭০১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ু (৪৮,০১৯) ও তৃতীয় স্থানে থাকা দিল্লি (৪৪,৬৮৮) এগোচ্ছে পঞ্চাশ হাজারের দিকে।
গুজরাতে মোট ২৪ হাজার ৫৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। উত্তরপ্রদেশে ১৪ হাজার ৯১, রাজস্থানে ১৩ হাজার ২১৬ জন, পশ্চিমবঙ্গে ১১ হাজার ৯০৯ জন ও মধ্যপ্রদেশে ১১ হাজার ০৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন কোভিডে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে হরিয়ানা (৮,২৭২), কর্নাটক (৭,৫৩০), অন্ধ্রপ্রদেশ (৬,৮৪১), বিহার (৬,৭৭৮), তেলঙ্গানা (৫,৪০৬) ও জম্মু ও কাশ্মীর (৫,২৯৮)-র মতো রাজ্যগুলি।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ পার করল।
অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কর আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে মোট ১১ হাজার ৯০৯ জন কোভিডে আক্রান্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। এ নিয়ে মোট ৪৯৫ জনের প্রাণ কাড়ল করোনা।
করোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি সুস্থ হয়ে ওটার সংখ্যাটাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা ইতিমধ্যেই ছাপিয়ে গিয়েছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাকে। এ নিয়ে মোট এক লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৩৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ছ’হাজার ৯২২ জন সুস্থ হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
দেশে সংক্রমণও যেমন বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুও। করোনা সংক্রমণের পর প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ১২ মার্চ। ২৯ এপ্রিল সেই সংখ্যা হাজারে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যু থেকে এক হাজারে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৪৮ দিন। তার পর প্রতি হাজার বৃদ্ধিতে কমেছে সময়। এক হাজার থেকে দু’হাজার বেড়েছিল মাত্র ১১ দিনে। এ ভাবে প্রথম পাঁচ হাজার মৃত্যু হয়েছিল ৮০ দিনে। কিন্তু তার পর বৃদ্ধিটা হয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজারে পৌঁছতে লাগল মাত্র ১৭ দিন। তবে এক দিনে ২০০০ মৃত্যু বৃদ্ধি, নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করল।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)