ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ছবি: পিটিআই।
শনিবার রাত পর্যন্ত সংখ্যাটা ঘোরাফেরা করছিল ৮০-র কোটাতেই। কিন্তু রবিবার সকালেই ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেল। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ভারতে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১০৭-এ। এর মধ্যে ১৭ জন বিদেশিও রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গতকালই কলকাতার জাদুঘর এবং সায়েন্সসিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিন বেলুড়েমঠেও ভক্তসমাগমে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা জারি করেছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। মঠ চত্বরে ঢুকতে পারলেও, প্রসাদ বিতরণ, আরতিতে অংশ নিতে পারবেন না ভক্তরা। দর্শন হবে না প্রেসিডেন্ট মহারাজের। অরাৎ মঠ চত্বরে কোনও জমায়েত করা যাবে না। যত দিন না পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তত দিন জরুরি মামলা ছাড়া হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালতগুলিতেও কোনও শুনানি হবে না বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল। হাইকোর্টেও থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনা আতঙ্কের জেরে আসন্ন পুরভোটের দিন ক্ষণ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে, কোচিতে সংক্রমণ নিয়েই বিমানে চেপে বসেছিলেন এক ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: একুশ শতক! গো-বিশ্বাসে চুমুক মূত্রে, বিজ্ঞান বহু দূর
দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্র এবং কেরলের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ বলে জানা গিয়েছে। কেরলে নতুন করে ২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কর্নাটকেও নতুন এক করোনা রোগীর হদিশ মিলেছে। লখনউয়ে ২২ মার্চ পর্যন্ত সমস্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। হরিয়ানায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ সমস্ত স্কুল, জিম থিয়েটার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শপিং মল। মধ্যপ্রদেশেও স্কুল, কলেজ ও লাইব্রেরি আপাতত বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। একই পথে হেঁটে অসমেও বন্ধ স্কুল, কলেজ ও জিমন্যাসিয়াম।
করোনা আতঙ্কে কাঁপছে বলিউডও। মুম্বইয়ে সমস্ত সিনেমার শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধারাবাহিক ও ওয়েব সিরিজের শুটিংও। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত জারি থাকবে। করোনায় কাঁপছে ইউরোপের ইটালি। রবিবার সেখান থেকে ২১৮ জন প্রবাসী ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হয়েছে। তাঁদের দিল্লিতে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত এ দেশে দু’জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যে কারণে শুক্রবারই করোনা সংক্রমণকে বিপর্যয় বলে ঘোষণা করা হয়। মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে কেন্দ্র। কিন্তু তা নিয়ে ধন্দ শুরু হয়েছে। কারণ সরকারি ঘোষণার বয়ানে ওই চার লক্ষ টাকার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
বরং আইসোলেশন সেন্টারগুলির পরিকাঠামো থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম, সবকিছুরই বন্দোবস্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকে। বলা হয়, বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল (এসডিআরএফ) থেকেই সমস্ত খরচ বহন করতে হবে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে শনিবার মাস্ক এবং হাত ধোওয়ার স্যানিটাইজারকে অত্যাবশকীয় পণ্যের মধ্যে শামিল করেছে কেন্দ্র। তার জন্য উৎপাদনকতারী সংস্থাগুলিকে এর জোগান বাড়ানোর নির্দেশ দিতে পারে রাজ্যগুলি।
আরও পড়ুন: রিপোর্ট নেগেটিভ, করোনা থেকে রক্ষা পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
করোনার মোকাবিলায় রবিবার সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জরুরি তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই তহবিলে ৭৩ কোটি টাকা দেবে ভারত। এ ছাড়াও করোনা দমনে একজোট হয়ে কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। করোনা-সহ বিভিন্ন রোগ দমনে একজোট হয়ে গবেষণার প্রস্তাব দিয়েছেন মোদী। করোনা মোকাবিলায় ভারতের সাহায্য চেয়েছে আফগানিস্তান।
প্রায় তিন মাস ধরে নোভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুঝছে চিন-সহ গোটা বিশ্ব। কমপক্ষে ১০০টি দেশে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়েছে। তাতে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ইউরোপের ইটালি, স্পেন এবং পশ্চিম এশিয়ার ইরানের পরিস্থিতি মারাত্মক। সেখানে ১২ হাজার ৭২৯ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৬১১ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে সহযোগিতা চেয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
গত কয়েক সপ্তাহে চিনে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, শনিবার সেখানে আরও ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ইতিমধ্যেই চিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছুঁয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের। করোনা দাঁত ফুটিয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় বিদেশি বিমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলীয় সরকারও। রবিবার থেকে দেশের সমস্ত দোকান, রেস্তরাঁ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্সও। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৭২ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ইটালির মতো করোনা থাবা গেড়েছে ইউরোপের স্পেনেও। ওই রোগে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী-ও। ইটালিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় দেড় হাজার জনের। স্পেনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় দুশো জনের। অন্য দিকে আরব আমিরশাহির এক প্রবাসী ভারতীয়ের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ইরানে করোনায় মারা গিয়েছেন ছশোর বেশি মানুষ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।