প্রতীকী ছবি।
করোনা-পরবর্তী সময়ে কাজ এবং কর্মী দুয়েরই ধরন বদলাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পমহলের একাংশ। তাঁদের অনুমান, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থায় স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমবে। তার বদলে অনেকেই কিছু দিন এই সংস্থায়, কিছু দিন আর এক সংস্থায় কাজ করবেন। কিংবা বাড়িতে বসে একই সঙ্গে একাধিক সংস্থার জন্য ‘ফ্রিল্যান্সার’-এর মতো কাজ করবেন।
লকডাউন-পর্বে অনেক কর্মীই বাড়িতে বসে কাজ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন। এই নতুন ‘মডেল’ নিয়ে সংস্থাগুলি চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে শিল্পপতিদের একটা অংশের মতে, করোনা-সঙ্কট আরও এক বার এ দেশে লাল ফিতের ফাঁসের সমস্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেগুলির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা দরকার। তা হলেই সঙ্কটের থেকেও ফায়দা তোলা যাবে।
হিরো এন্টারপ্রাইজ়ের চেয়ারম্যান সুনীল মুঞ্জল বলেন, “কত জন কর্মীকে অফিস-বন্দি করে রাখার প্রয়োজন রয়েছে, কত জন বাড়িতে বসেই কাজ করতে পারেন, অফিসের সময় কতখানি হওয়া উচিত, কর্পোরেট সংস্থাগুলি এখন নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করছে।” তাঁর মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কাজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: পুণের শুটিং দল ঠাঁই পেল জম্মুর পরিবারে
আজ নীতি আয়োগ আয়োজিত এক আলোচনায় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকম-এর প্রেসিডেন্ট দেবযানী ঘোষ জানান, অফিসের চরিত্র বরাবরের মতো বদলে যাবে। কোনও কর্মী বাড়িতে বসে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করছেন— এই ‘গিগ ইকনমি’ আরও বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিস ঘোষণা করেছে, ২০২৫-এ তাদের ক্যাম্পাসে মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মী কাজ করবেন। বায়োকনের এগ্জিকিউটিভ চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার শ’-এরও মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চলবে। কমবে ‘বিজনেস ট্রাভেল’। কারণ করোনা-কালে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ভিডিয়ো কনফারেন্সও একই রকম কার্যকরী।
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত সিলমোহর, সোমবার থেকে দেশে কী কী কাজ শুরু হচ্ছে দেখে নিন
কিন্তু কাজের এই নতুন ধরনের সুবিধা ছোট-মাঝারি শিল্প বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন টিমলিজ-এর চেয়ারম্যান মনীশ সাভরওয়াল। তাঁর যুক্তি, “স্নাতকদের ৭৫ শতাংশ বাড়িতে বসে কাজ করছেন। কিন্তু যাঁরা স্নাতক নন, তাঁদের মাত্র ১০ শতাংশের বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে নরেন্দ্র মোদী ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’-এর কথা বলেছিলেন। লকডাউনের পরে প্রধানমন্ত্রী আর্জি জানিয়েছেন, যাতে নিয়োগকারী সংস্থাগুলি ছাঁটাই না করে। বেতন বন্ধ না করে। সাভরওয়াল বলেন, “সবাই কি টাটা-বিড়লা-অম্বানীর সংস্থায় কাজ করে? ৬ কোটির বেশি ছোট-মাঝারি সংস্থার মধ্যে ৯৮ শতাংশ সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ১০ জনের কম। এরা কোথা থেকে বেতন দেবে? এ দেশে ব্যবসা করতে ৫৭ হাজার নিয়মকানুন মানতে হয়। ৩১০০ নথি জমা দিতে হয়। গড়ে দিনে ৮ বার নিয়ম বদলায়। এতে তো ছোট-মাঝারি সংস্থার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।” দেবযানীর দাবি, “আগামী দু’তিন বছরের জন্য ছোট-মাঝারি সংস্থা ও স্টার্ট-আপগুলিকে সমস্ত রকম নিয়মকানুন থেকে ছাড় দেওয়া হোক।”
সাভরওয়ালের মতে, “অবিলম্বে শ্রম সংস্কারের দাওয়াই দরকার। কারও পক্ষে এ দেশের শ্রম আইনের ১০০ শতাংশ মানতে গেলে ১০ শতাংশ আইন ভাঙতে হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে ইউজিসি-র লাল ফিতের ফাঁসে ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় লকডাউনের মধ্যে অনলাইন ক্লাস চালু করতে পেরেছে। কেন্দ্রীয় সরকারে ৫৮টা মন্ত্রক। জাপান ৮টি, আমেরিকা ১৪টি, ব্রিটেনে ২১টি মন্ত্রকেই কাজ চলছে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)